ঢাকা: বিশ্বের শক্তিধর ছয়জাতি’র সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিকে ভারতের জন্য সুখবর বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি।
মঙ্গলবার এই সমঝোতার চূড়ান্ত পরিকল্পনা ঘোষণার পর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়ে, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অন্যতম লাভবান হতে চলেছে ভারত।
এর ফলে এক দিকে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি এবং তার দাম মেটানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। তেমনই কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের (যেগুলি চড়া দামে ভারত থেকে আমদানি করত নিষেধাজ্ঞা-পূর্ববর্তী ইরান) তেহরানে রফতানির দরজাটাও খুলে যাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার এর সুবিধাও পাবে বিশ্বের অন্যতম পেট্রোলিয়াম আমদানিকারক দেশ ভারত।
ফলে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় অনেকটাই সুপ্রসন্ন হবে ভারতের বাণিজ্যলক্ষ্মী, এমন দাবি নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের।
জানা গেছে, শীঘ্রই ইরানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ওএনজিসি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি গ্যাস ক্ষেত্র (ফারজাদ-বি গ্যাস ফিল্ড) আবিষ্কার করলেও এত দিন এর সুফল নিতে পারেনি। এ বার সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য যেন ওএনজিসিকে অধিকার দেওয়া হয়, তার জন্য তেহরানকে অনুরোধ করবে দিল্লি। এত দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইউরোপীয় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে গ্যাসের দাম মেটাতে পারেনি নয়াদিল্লি। চুক্তি হলে সেই সমস্যা আর থাকছে না। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তেলের দাম বাবদ যে অর্থ বকেয়া রয়েছে (সাড়ে ছয়শ’ কোটি ডলার) এবার তা সহজেই মিটিয়ে দিতে পারবে ভারত।
পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়ায় এতদিন ইউরোপ এবং আমেরিকার অবরোধের ভয়ে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইরানে বিনিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ট দ্বিধান্বিত ছিল। সেই কারণেই বিদেশের মাটিতে সর্ববৃহৎ গ্যাস ব্লক (ফারজাদ) আবিষ্কার করা সত্ত্বেও নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি নয়াদিল্লি। নয়াদিল্লির প্রত্যাশা, এবার ইরান দুঃসময়ের বন্ধুর দাবিতে সাড়া দেবে।
জানা গেছে, ভারত তার প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে। ফলে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলোর (ইন্ডিয়ান অয়েল, এইচপিসিএল, বিপিসিএল) সুবিধা হবে। নিষেধাজ্ঞা ওঠায় ভারতের ওষুধ শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অন্যান্য অনেক সংস্থাও লাভবান হবে। ভারত আগে ইরানে বাসমতী চাল, সয়াবিন, চিনি, বার্লি থেকে শুরু করে মাংস পর্যন্ত রফতানি করতো।
গত এক দশক ধরে আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের ঝড়ঝঞ্ঝার সামনে যখনই পড়েছে ইরান, ভারত যত দূর সম্ভব কূটনৈতিকভাবে তেহরানের পাশে দাঁড়িয়েছে। একাধিক বার তেহরান সফর করে পশ্চিমি দেশগুলিকে বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এমনকি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দিল্লি এসে ইরানকে বয়কট করার অনুরোধ জানালেও পুরোপুরি সেই অনুরোধ মানেনি ভারত।
এছাড়া নয়াদিল্লির কাছে শুধু তেল নয়, ভূকৌশলগত কারণেও তেহরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়া তথা আফগানিস্তানে পা রাখার জন্য ইরানের অবস্থান ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য চাবাহার বন্দর উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ। এ বার সেই বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি ভারতের জন্য সহজ হল বলে মনে করছে দিল্লি। সেক্ষেত্রে চাপে রাখা যাবে পাকিস্তানকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
আরআই