ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

একজন আবদুল কালাম: পরশ পাথর, শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
একজন আবদুল কালাম: পরশ পাথর, শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক এপিজে আবদুল কালাম ও সৃজন পাল সিং / ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: প্রত্যেকরই মনের আধারে খোদাই করা থাকে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্বের ছবি। জীবনে অন্তত একবারের জন্য হলেও তার কাছাকাছি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে প্রত্যেক মানুষই।



কিন্তু সবার প্রতিই এতটা প্রসন্ন হন না ভাগ্যদেবী। তবে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম উত্তর প্রদেশের সৃজন পাল সিং।

সৃজন পাল সিং হলেন সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে অন্যতম যিনি খুব কাছে থেকে সদ্য প্রয়াত ভারতীয় রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের সংসর্গ লাভের দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন।  

আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের স্নাতক সৃজন ২০০৯ সাল থেকে ড. কালামের হাতে গড়া যুব আন্দোলন ‘হোয়াট ক্যান আই গিভ’, ‘এনার্জি ইন্ডেপেন্ডেন্স ফর দি নেশন’, ‘নিউক্লিয়ার অ্যান্ড স্পেস মিশন’ এবং ‘প্রভাইডিং উরবান অ্যামেনিটিস ইন রুরাল এরিয়াস’ প্রভৃতি বিভিন্ন জনসেবামূলক প্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। একই সঙ্গে ড. কালামের বেস্ট সেলিং বই ‘টার্গেট থ্রি বিলিয়ন’রও সহপ্রকাশক তিনি।  

সৃজন বর্তমানে ড. কালামের হাতে গড়া ‘হোয়াট ক্যান আই গিভ মিশন’ নামের যুব আন্দোলন নিয়ে কাজ করছেন। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী বর্তমানে দশ লাখেরও বেশি।

গুয়াহাটি থেকে সদ্য প্রয়াত সাবেক ভারতীয় প্রেসিডেন্ট ড. কালামের মৃতদেহবাহী কফিন নিয়ে প্লেনে ওঠার আগে ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে ড. কালাম সম্পর্কে নিজের স্মৃতিচারণ করেন সৃজন পাল সিং।

সৃজনের মতে দীর্ঘ কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনে বিজ্ঞানী, প্রেসিডেন্ট, লেখক, ‘মিসাইল ম্যান’ প্রভৃতি ভূমিকা পালন করলেও ছাত্রদের মাঝে এ পি জে কালাম স্মরণীয় হয়ে আছেন একজন শিক্ষক হিসেবেই।
 
সংক্ষেপে ড. কালামকে ‘ব্যক্তিত্বপরায়ন, একাগ্র, স্পর্শকাতর এবং কৌতূহলী’ এই চারটি উক্তিতে চিত্রিত করেছেন সৃজন।
 
সৃজন বলেন, ‘তিনি (ড. কালাম) ছিলেন, আমার এবং আমার প্রজন্মের প্রত্যেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আমি যখন ২০০২ সালে মাত্র আইআইএম থেকে পাস করে বের হই তখন সবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তিনি ছিলেন জাতির আশার আলোকবর্তিতা। তার এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পুরো জাতি এই আলোকবর্তিতা হারালো।

ড. কালামের সঙ্গে তার কথোপকথন এবং আলাপের স্মৃতি চারণ করে সৃজন বলেন, ‘তার প্রত্যেকটি শব্দ ছিলো অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি বলতেন, ‘যদি আমি করতে পারি, তবে তুমি করতে পারবে, আর যদি তুমি করতে পারো তবে সব ভারতীয়ই তা করতে পারবে। ’ তিনি সবসময়ই তরুণদের জন্য ছিলেন রোল মডেল এবং অনুপ্রেরণার প্রতীক। ’

দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর তার সাহচর্যে থাকার স্মৃতিচারণ করে সৃজন বলেন, ‘তার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেক মুহূর্তই ছিলো আনন্দময়। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি দেশের একটি সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছো। এখন একে কাজে লাগিয়ে করে কী করার পরিকল্পনা তোমার?’ তিনি সবসময়ই আমাকে অপরের জন্য এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় এমন কিছু করতে বলতেন।

সৃজনের নিজের জন্যও ড. কালাম ছিলেন পরশ পাথর বা তার থেকে বেশি কিছু। শিক্ষক থেকে শুরু করে তিনি ছিলেন সৃজনের গুরু এবং আরও অনেক কিছু।

সৃজন বলেন, ‘তিনি তার জীবনের সব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই ছিলেন আমার পথ প্রদর্শক। তিনি সব সময়ই বলতেন ‘ছোটো ছোটো জিনিসই বড় বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। ’ এছাড়া আমার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের পিতামাতা ও পরিবার পরিজনের যত্ন নেয়, খেয়াল রাখে সে ব্যাপারেও তিনি আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। তার মনে হয়েছিলো এখনকার ছেলেমেয়েরা এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছে।

এছাড়া মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য গেজেট নিয়ে মাতোয়ারা বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে ড. কালাম বলেছেন ‘ওই সব গেজেট থেকে মুখ তুলে তাকাও, চারপাশে দেখো।

যখনই আমাকে ফোন ব্যবহার করতে দেখতেন তিনি বলতেন, ‘তোমার হেয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুককে একপাশে সরিয়ে রাখো আর দেখো সুন্দর পৃথিবীকে। দেখ তোমার চারপাশের পৃথিবীকে। পৃথিবী কী সুন্দর সাজে সজ্জিত।

সৃজন বলেন, ‘যদিও ড. কালাম এখন আর আমাদের মাঝে নেই তবে শিশুদের জন্য এবং সাধারণ মানুষের জন্য তার ভালোবাসা ছিলো সুবিদিত। তিনি তার পুরো জীবনে একবারের জন্যও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছার এবং তাদের দুর্দশা থেকে রক্ষা করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ’

নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনাতেও গুরুর এই দৃষ্টান্তকে বাকি জীবন অনুসরণ করে যেতে চান বলে অঙ্গীকার করেন সৃজন।

সৃজন জানান, ‘তিনি (ড. কালাম) চেয়েছিলেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে যেতে। এ ব্যাপারে ২০২০ সাল নাগাদ একটি স্বপ্নও ছিলো। এছাড়া সৌরশক্তির ব্যবহারের ব্যাপারেও তিনি দ্বিগুণ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

‘মানুষকে সব সময়েই কণ্টকময় পথ বেছে নিতে বলতেন ড. কালাম। আমাকেও সবসময় তিনি সবচেয়ে কঠিন পথ বেছে নিতে বলতেন।

তিনি আরও বলতেন ‘কখনই সমস্যাকে তোমার মাথায় চড়ে বসতে দিয়ো না। বরং তুমি তোমার ক্যাপটেন হও এবং নিজেকে সমস্যার মধ্যে দিয়েই পরিচালনা করো।

সৃজন বলেন,‘এসব প্রজ্ঞাই তিনি তার শিক্ষকের কাছে পেয়েছিলেন এবং নিজে যখন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন তখন এগুলোই তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রবাহিত করবেন।

এই মহান ব্যক্তি হয়তো আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার কর্ম এবং স্মৃতি সবসময়েই আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
আরআই

** ‘স্যারের বাসায় কখনো কোনো টিভি ছিলনা’
** ‘পারলে একদিন অতিরিক্ত কাজ করবে’
** লন্ডনে নৈশভোজ-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বাতিল মমতার
** আবদুল কালামের শেষ টুইট
** আবদুল কালামের স্মরণে ভারতীয় সংসদে নিরবতা
** আবদুল কালামের সেরা ১০ উক্তি
** দিল্লি নেওয়া হচ্ছে আবদুল কালামের মরদেহ
** আবদুল কালামের যে ইচ্ছা অপূর্ণই রয়ে গেলো
** টুইটারে আবদুল কালামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
** এপিজে আবদুল কালাম আর নেই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।