ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রার জীবনাবসান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রার জীবনাবসান শুভ্রা মুখার্জি

ঢাকা: ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির জীবনাবসান হয়েছে। নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে (আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে মৃত্যু হয়েছে তার।

এসময় শুভ্রার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

ভারতীয় রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও স্বজনদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে এক বার্তায় বলা হয়, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানানো হচ্ছে, সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে ফার্স্ট লেডি শুভ্রা মুখার্জির জীবনাবসান হয়েছে। ’

শ্বাসজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শুভ্রা মুখার্জিকে নয়াদিল্লির আর্মি হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রেই (আইসিইউ) ছিলেন।
suvra
১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যশোর জেলায় (বর্তমানে নড়াইল) জন্মগ্রহণ করেন শুভ্রা মুখার্জি। তার শৈশবও কেটেছে এখানে। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন শুভ্রা।

বাংলার গ্রাম থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন
প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেও তার স্ত্রী শুভ্রার সঙ্গে ছিলো বাংলাদেশের নাড়ির টান। শুভ্রা মুখার্জির জন্ম এই বাংলাতেই, নড়াইলের চিত্রা নদীর তীরের এক ছোট্ট গ্রামে।

নড়াইল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভদ্রবিলা গ্রামে চিত্রা নদী প্রায় ৯০ ডিগ্রি বাঁক খেয়ে অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এ গ্রামেরই এক জমিদার বাড়িতে জন্মেছিলেন ভারতের রাইসিনা হিলের (ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন) গৃহকর্ত্রী শুভ্রা।

শুভ্রার পিতার নাম জমিদার অমরেন্দ্র ঘোষ ও মায়ের নাম মীরা রানী ঘোষ। শুভ্রা দেবী ভালো নাম হলেও গীতা তার ডাক নাম।
/pranab_partha
জন্মের পর শুভ্রার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে নড়াইলে। এখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা ও সীতারামপুর গ্রামে তার অনেক আত্মীয়-স্বজন বসবাস করেন।

শৈশবের প্রথম দিকটা ভদ্রবিলা গ্রামে পিত্রালয়ে কাটলেও পরে মা তাকে নিয়ে যান নড়াইলের সীতারামপুরে, মামার বাড়িতে। সেখানে চাঁচড়া বোলদেভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমান নাম চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ভর্তি করেন তাকে। এ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর পড়াশোনা করতে ১৯৫৫ সালে গীতা চলে যান কলকাতার তারকেশ্বর লাইনে, আরেক মামার বাড়িতে।

৯ ভাই-বোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের আগেই তারা সবাই কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর জন্মভিটায় কেবল ফিরে আসেন তার এক ভাই কানাই লাল ঘোষ।

ভদ্রবিলা গ্রামে এখনও শুভ্রার পিতৃকূলের মালিকানায় প্রচুর জমিজমা আছে। সেগুলো দেখাশোনা করেন ভাই কানাই লাল ও স্ত্রী দুলালী ঘোষ। শুভ্রার মামাতো ভাইরা এখনো নানাবাড়ি সীতারামপুরে বসবাস করেন। ওই গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়টি শুভ্রার মায়ের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।

শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ, এক মেয়ে শর্মিষ্ঠা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। অভিজিৎ মুখার্জি বর্তমানে ভারতের এমএলএ। শর্মিষ্ঠা কত্থক নৃত্যশিল্পী।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন অধ্যাপক। ভালো রবীন্দ্রসংগীতও গাইতে পারতেন। গীতাঞ্জলি নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার ছিলেন তিনি। ভালো লিখতেনও। অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেছেন।

নাড়ির টানে শুভ্রা ১৯৯৫ সালে এবং ২০১৩ সালে নড়াইলে পিতৃভিটায় বেড়াতে এসেছিলেন; প্রথমবার মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে, দ্বিতীয়বার স্বামী প্রণবের সঙ্গে (রাষ্ট্রীয় সফরের ফাঁকে)। এসময় শুভ্রা ঘুরে বেড়িয়েছেন ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটায়, সীতারামপুরে মামাদের বাড়িতে। জন্মভিটা আর শৈশবের সেই চিত্রা নদী দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন শুভ্রা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫/আপডেট ১৩০৬ ঘণ্টা/আপডেট ১৩২৭ ঘণ্টা
এইচএ/

** আপাদমস্তক বাংলার মেয়ে ছিলেন শুভ্রা মুখার্জি
** প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুতে মমতার শোক
** নড়াইল থেকে দিল্লির রাইসিনা হিল, শ্রদ্ধাঞ্জলি শুভ্রা মুখার্জি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।