ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নড়াইল থেকে দিল্লির রাইসিনা হিল, শ্রদ্ধাঞ্জলি শুভ্রা মুখার্জি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
নড়াইল থেকে দিল্লির রাইসিনা হিল, শ্রদ্ধাঞ্জলি শুভ্রা মুখার্জি

ঢাকা: মঙ্গলবার দিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি।

শ্বাসসজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় শুভ্রা মুখার্জিকে আর্মি হসপিটাল (রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল)-এ ভর্তি করা হয়।

ভর্তির পর থেকেই হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন তিনি।

প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেও তার স্ত্রীর সঙ্গে ছিলো বাংলাদেশের নাড়ির টান। শুভ্রা মুখার্জির জন্ম এই বাংলাতেই, নড়াইলের চিত্রা নদীর তীরের এক ছোট্ট গ্রামে।

নড়াইল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভদ্রবিলা গ্রামে চিত্রা নদী প্রায় ৯০ ডিগ্রি বাঁক খেয়ে অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এ গ্রামেরই এক জমিদার বাড়িতে ১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন ভারতের রাইসিনা হিলের (ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন) গৃহকর্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি।

জন্মের পর শুভ্রার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের নড়াইলে। এখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা ও সীতারামপুর গ্রামে তার প্রচুর আত্মীয়-স্বজন বসবাস করেন।

শুভ্রার পিতার নাম জমিদার অমরেন্দ্র ঘোষ ও মায়ের নাম মীরা রানী ঘোষ। শুভ্রা দেবী ভালো নাম হলেও গীতা তার ডাক নাম।

শৈশবের প্রথম দিকটা ভদ্রবিলা গ্রামে পিত্রালয়ে কাটলেও পরে মা তাকে নিয়ে যান নড়াইলের সীতারামপুরে, মামার বাড়িতে। সেখানে চাঁচড়া বোলদেভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমান নাম চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ভর্তি করেন তাকে। এ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর পড়াশোনা করতে ১৯৫৫ সালে গীতা চলে যান কলকাতার তারকেশ্বর লাইনে, আরেক মামার বাড়িতে।

প্রণব বাবুর সঙ্গে বিয়ের সময় গীতার বয়স ছিলো খুবই কম। ভালোবাসা করেই বিয়ে হয় তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন অধ্যাপক। ভালো রবীন্দ্রসংগীতও গাইতে পারতেন। গীতাঞ্জলি নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার ছিলেন তিনি। ভালো লিখতেনও। অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেছেন তিনি।

৯ ভাই-বোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের আগেই তারা সবাই কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর জন্মভিটায় কেবল ফিরে আসেন তার এক ভাই কানাই লাল ঘোষ।

ভদ্রবিলা গ্রামে এখনো শুভ্রার পিতৃকূলের মালিকানায় প্রচুর জমিজমা আছে। সেগুলো দেখাশোনা করেন ভাই কানাই লাল ও স্ত্রী দুলালী ঘোষ। শুভ্রার মামাতো ভাইরা এখনো নানাবাড়ি সীতারামপুরে বসবাস করেন। ওই গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়টি শুভ্রার মায়ের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।

শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি ও সুরজিৎ মুখার্জি, এক মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। অভিজিৎ মুখার্জি বর্তমানে ভারতের এমএলএ। শর্মিষ্ঠা কত্থক নৃত্যশিল্পী।
 
দেশ স্বাধীনের পর নাড়ির টানে ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে শুভ্রা একবার এসেছিলেন নড়াইলে। ঘুরে বেড়িয়েছেন ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটায়, সীতারামপুরে মামাদের বাড়িতে। মায়ের জমিতে প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা অনুদানও দেন। জন্মভিটা আর শৈশবের সেই চিত্রা নদী দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন শুভ্রা।

এর দীর্ঘ ১৭ বছর বাদে স্বামী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ফের এসেছিলেন জন্মভূমিতে। সঙ্গে এনেছিলেন স্বামী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে।

শুভ্রা মুখার্জি এ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেও বাংলার সঙ্গে ছিন্ন হবে না তার আত্মার বন্ধন। ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও আপাদমস্তক তিনি ছিলেন এই বাংলারই মেয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
আরআই

** প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রার জীবনাবসান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।