ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মন্দা হাওয়ায় টালমাটাল তেলের বাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
মন্দা হাওয়ায় টালমাটাল তেলের বাজার

ঢাকা: ২০১৪ সালের শেষ দিক থেকেই পড়তে শুরু করেছে তেলের দাম। দরপতনের এ ধারায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলারের (৩,১১৬ টাকা) নিচে নেমে গেছে।

২০০৯ সালের মার্চ মাসের পর এই প্রথম এতোটা মন্দাবস্থা দেখলো তেলের বাজার।

২০১৪ সালের জুন মাসেও অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার (৭,৭৯১ টাকা) করে ছিল। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই পড়তে শুরু করে এর দর।

তেলের এ দরপতনে বিশ্ববাজারে এর সরবরাহের আধিক্যকে দায়ী করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কেউ কেউ বলছেন, এ সরবরাহই বলে দেয়, ধারণার চেয়েও বেশি তেল মজুদ রয়েছে পৃথিবীর গর্ভে।

সমালোচকরা দরপতনে মার্কিন শেল তেল প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের প্রতিযোগীতাকেই দায়ী করছেন বেশি। বাজার দখল ও ধরে রাখার লড়াইয়ে উভয়পক্ষ সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক’র নিরবতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। দাম পড়তে শুরু করলে সাধারণত হস্তক্ষেপ করে ওপেক। প্রথমেই সংগঠনটি উৎপাদন কমিয়ে দেয়। কিন্তু এবার এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সমালোচকরা বলছেন, ওপেক মূলত সৌদি আরবের ইশারায় কাজ করে। এবার দেশটি বাজার ধরে রাখায় একগুঁয়ে অবস্থান নিয়েছে। তবে আলজেরিয়াসহ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র তেলের দরপতনে ওপেক’র জরুরি বৈঠক চাইছে। চলতি বছর ডিসেম্বরেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এর পেছনে অবশ্য অন্য একটি কারণও দেখছেন বিশ্লেষকরা। ওপেকভুক্ত দেশগুলো কিছুদিন আগেও বিশ্বের ৬০ শতাংশ তেল উৎপাদন করতো। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে মার্কিন শেল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সুলভ দরে তেল সরবরাহ করছে। ফলে বিশ্ববাজারের ৬০ শতাংশ এখন মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে চলে গেছে।  

তেলের দরপতনে ইরানও একটি বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। এমন মনে করার পেছনে শক্ত যুক্তিও রয়েছে। বিশ্ববাজারে দেশটি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের দিনই অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১ ডলার পড়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, ইরান তেল বাজারে এলে রীতিমত বন্যা বয়ে যাবে। অনেক বিশেষজ্ঞ এ পণ্যের দর ব্যারেল প্রতি ১৫ ডলারে (১,১৬৮ টাকা) নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন।

২০১২ সালের হিসেবে ইরান দিনপ্রতি ৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে। দেশটি এরই মধ্যে এ উৎপাদন এক বছরের মধ্যে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেই এমন সিদ্ধান্তে গেছে দেশটি।

কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ইরানকে বাজারে না দাঁড়াতে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেও সৌদি আরব তেলের সরবরাহে তারল্য ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যমতে, ২০১৫ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী রাজকীয় কোষাগারে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৬২০ মিলিয়ন ডলারের (৫১ লাখ ৩৯ হাজার ২৬১ কোটি টাকা) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তবে সে তুলনায় ইরান যথেষ্ট দুর্বল অর্থনীতির দেশ। কাজেই তেলের বাজারে আয় কমে গেলেও আপাতত খুব একটা সমস্যা মনে করছে না সৌদি আরব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫/আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।