ঢাকা: আশা দেখাচ্ছে প্যারিস। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এখন পর্যন্ত আলোচনা ও অগ্রগতিতে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য আশানুরূপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছে জাতিসংঘ।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও এ সংক্রান্ত সংকট মোকাবেলায় উষ্ণতা কমাতে প্রয়োজন বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরন শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা। আর যাদের মাধ্যমে অহরহ এ নিঃসরন হচ্ছে, তাদের নিয়েই এবার বৈঠক করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) প্যারিসে কার্বন উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর প্রতিনিধি, শিল্প উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগী, সিটি মেয়র ও জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাদের নিয়ে এ বৈঠকে বসেন বান কি-মুন। এ সময় কার্বন নিঃসরন কমাতে কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবন, জলবায়ু বান্ধব বিনিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মানে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘের ‘দি স্টেট অব সিটি ক্লাইমেট ফিনেন্স রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়।
রিপোর্টের প্রধান বিষয় ছিল ‘সিটিস ক্লাইমেট ফিন্যান্স লিডারশিপ অ্যালাইয়েন্স (সিসিএফএলএ)’, যা ৪০টির বেশি ব্যাংক, জাতীয় সরকার ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়। এই জোটের মূল উদ্দেশ্য হলো নগরে কার্বন উৎপাদন কমানো, জলবায়ু সহায়ক অবকাঠামো নির্মান ও আগামী ১৫ বছরের মধ্যে নগরাঞ্চলের বিনিয়োগ দুর্বলতা দূর করার কৌশল নির্ধারন করা।
মহাসচিব বলেন, জলবায়ু হুমকিতে থাকা রাষ্ট্র ও নগরগুলোর জন্য দ্রুত বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আজ প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোথায় কি করা দরকার তা জানতে পেরেছি আমরা। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে। আমি সকল রাষ্ট্র, সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী এবং সকল আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে অধিক দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বান কি-মুন ছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিবের জলবায়ু সংক্রান্ত দায়িত্ব পাওয়া সহকারী মহাসচিব জেনোস পাজতঁর, বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ৠাচেল কেট, পার্টনারশিপ অ্যান্ড স্ট্রাটেজি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ অর্লিঙ্গে, এজেন্সিস ফ্রান্সিস দ্য ডেভেলপমেন্ট’র (এএফডি) অমল লি আমিনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বনভূমি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, পেরু, রাশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, চীন, ভারতসহ ৪৫টি রাষ্ট্র। প্যারিস সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রগুলো বন রক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও স্থানীয়দের সঙ্গে চুক্তি করার ঘোষনা দিয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, বনের ওপর নির্ভরশীল এই জাতিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রগুলো সমান অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বর্তমান বনভূমী রক্ষা, নতুন বন সৃষ্টি ও প্রতিপালনে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া সম্মেলনে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রগুলো এরই মধ্যে কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ ২০৬০ সালের মধ্যে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন ৮৭ থেকে ৯০ ভাগ কমিয়ে আনার ঘোষনা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় থেকে দুই ডিগ্রির বেশি বাড়তে দেওয়া চলবে না বলেও একমত হয়েছেন রাষ্ট্রনেতারা।
জাতিসংঘ বলছে, এই ঘোষনা বাস্তবায়নে ২০২০ সালের আগে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প কারখানা তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য অবশ্য প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে।
৩১ নভেম্বরে শুরু হওয়া এই কপ-২১ সম্মেলনে এখন একটি গ্রহণযোগ্য ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে রাষ্ট্রগুলো। আগামী কয়েকদিনে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে এ চুক্তির খসড়া পূর্ণতা পাবে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থের বিষয়গুলো এই আলোচনার ওপরই নির্ভর করছে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। ১১ ডিসেম্বের চূড়ান্ত চুক্তির মাধ্যমে প্যারিস সম্মেলনের ইতি ঘটবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
আরএম/ আরএইচ