যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পল মানাফোর্ট বলেছেন, তিনি এখন রীতিমতো হতাশ। ফিলিপাইনের ইমেলদা মার্কোস, অ্যাঙ্গোলার জোনাস সাভিম্বি, ইউক্রেনের ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের মতো বাঘা বাঘা ডিক্টেটরদের সামলে অভ্যস্ত এই মানাফোর্ট।
এদিকে হাল ছেড়ে দিচ্ছে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটিও। কমিটির প্রধান রিন্স প্রাইবাস ডনাল্ডের দিকে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন, তিনিও হাত গুটিতে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।
এমনকি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধুরা, গুটিকয়েকই তার রয়েছে বটে, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি গিলিয়ানি যার অন্যতম, তাদের মাথা এখন আড়াআড়ি করে নাড়াচ্ছেন। কে নিতে যাবে তার এতসব উল্টাপাল্টা কথা আর কাজের দায়িত্ব। তাই সবারই এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা।
আর ভেতরকার খবর হচ্ছে ট্রাম্পের পুত্র-কন্যারা- যাদের মধ্যে এই সময়ের আধুনিকতার কিছু ছোঁয়া রয়েছে- যদিও রাজনৈতিক জ্ঞান গরিমায় একেবারেই ঠনঠনা, তারাও মনে মনে চাইছে- এবার থামাও তারে। যদিও মুখ ফুটে বলার সৎসাহস নিয়ে তৈরি হননি তাদের কেউই।
রিপাবলিকান দলের সর্বত্র আর সকলে, ভেতরকার মানুষগুলো, নির্বাচিত কর্মকর্তারা সবাই মিলে, যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে তাও, এক উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ট্রাম্প এক গোঁয়ার, যার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্সি জয় তবেই সম্ভব যবে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে জুলিয়ান আসাঞ্জ, ভ্লাদিমির পুতিনরা। আর এপথেও হতে পারে, কোনও এক প্রসিকিউটর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির সকল সম্ভাবনায় ধস নামিয়ে দিলেন, তখন ফাঁকা মাঠে ছক্কা হাঁকালেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের একজনতো বলেই ফেললেন, অভ্যন্তরীণ নয়, বাইরের কেউ ভূমিকা রেখেই ট্রাম্পকে এই নির্বাচনে জিতিয়ে দেবেন।
সিএনবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতনামা রিপোর্টার জন হারউড তার এক টুইটবার্তায় ম্যানাফোর্টের মনের কথাটি জানিয়েছেন। আর বলেছেন, দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। অন্য কিছু মিডিয়াতে অবশ্য এসেছে ম্যানাফোর্ট এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন, শিগগিরই ক্যাম্পেইনের মুখপাত্র জ্যাসন মিলার এ ব্যাপারে বিবৃতি দেবেন।
ম্যানাফোর্টের বন্ধু ও মিত্র বলে পরিচিত এমন অনেকেই তাকে উদ্ধৃত করেই বলছেন, তিনি ‘হতাশ’। এর প্রধান কারণ ট্রাম্প আসলে কারো কোনও পরামর্শের ধার ধরছেন না। এমনকি শুনতেও চান না। বরং নিজের মতো করে টুইটার আর ফেসবুকে এটা সেটা লিখে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়ছেন।
উপদেষ্টাদের একজন একটি সংবাদমাধ্যমকে ঠিক এভাবে বলছিলেন, ডনাল্ড ট্রাম্প এখন টিভি ম্যানিয়াকে পরিণত হয়েছেন। দিনরাত টিভির সামনে পড়ে থাকেন আর সেখানে নিজের বিরুদ্ধে কিছু দেখলে বা শুনলেই ক্ষেপে যান। রেগেমেগে এটা সেটা বলতে থাকেন, নয়তো টুইট করেন। তাতে নতুন সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে ট্রাকে আনতে দীর্ঘ দিনের বন্ধু রুডি গিলিয়ানি ও টম বারাককে কাজে লাগানো হচ্ছে। তারাই পারবেন, খান পরিবার নিয়ে ট্রাম্প যাতে আর কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করেন তা নিশ্চিত করতে।
ওদিকে আগেই বলেছি, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সঙ্গে দূরত্বটা ক্রমেই বাড়ছে ডনাল্ড ট্রাম্পের। নির্বাচনের আগেই তাতে কারচুপি হবে বলে যে মন্তব্য ট্রাম্প করেছেন, সে নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যম আরএনসি’র কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এর নারী মুখোপাত্র লিন্ডসে ওয়াল্টার বলে দিয়েছেন, এর ব্যাখ্যা ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনই ভালো দিতে পারবে।
আসলে কনভেনশন পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প যেসব তামাশা আর কৌতুক সৃষ্টি করছেন তাতে দলের নেতারা সত্যিই বিপাকে। ক্লেভল্যান্ড কনভেনশনের সপ্তাহ কয়েক আগেও রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির মধ্যে একটা ধারনা গড়ে উঠতে শুরু করেছিলো, হতে পারে ট্রাম্পকে ঘিরেই রিপাবলিকানরা আবার একাট্টা হবে। আর সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তারা হিলারি ক্লিনটনকে রুখে দিতেও পারবে।
কিন্তু ক্লেভল্যান্ড কনভেনশনের পর ফিলাডেলফিয়ায় যে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন হয়ে গেলো তাতে পুরো হিসাব-নিকাশই পাল্টে গেছে। ওই কনভেনশনে বক্তৃতা করেন একসময়ের ডাকসাইটে রিপাবলিকান, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ। আর তিনি তাতে স্পষ্টই ঘোষণা দিয়ে দেন, আর যাই হোক ডনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি এনডোর্স করছেন না। এর মধ্যে ট্রাম্পের স্ত্রী, এক সময়ের সেক্সসিম্বল মডেল মেলানি ট্রাম্প জন্ম দিলেন আরেক কাহিনী। কনভেনশন বক্তৃতায় তিনি যা কিছু বললেন তা ছিলো মিশেল ওবামার দেওয়া বক্তৃতার কাট-পেস্ট। সে নিয়ে যখন সমালোচনার ঝড় তুঙ্গে তখন মেলানির সব নগ্ন ছবিতে ছেয়ে গেলো সাইবার জগত। কথা উঠলো ট্রাম্প নিজেই বুঝি স্ত্রীর পুরোনো এসব ছবি জনসমক্ষে এনেছেন। এসব কারণে পার্টির নেতাদের পক্ষে তাদের প্রার্থীর হয়ে কিছু বলার আর মুখ থাকলো না।
তবে এসব সমালোচনা একেবারেই নিতে পারছেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। নেই কোনও গঠনমূলক প্রতিক্রিয়াও। ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের লোকেরা তাতে বিব্রত। একজনতো বলেই ফেলেছেন, একটা বাচ্চাও এরচেয়ে বুঝে শুনে প্রতিক্রিয়া দেবে।
প্রাইবাস চেষ্টার কমতি রাখেন নি। নিজে না বললেও দলের কর্মকর্তাদের পইপই করে বলছেন, ট্রাম্পকে থামাও। না থামলে তার মাশুল তাকে বড় করেই গুনতে হবে।
বাংলাদেশ সময় ১৫৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৬
এমএমকে