ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা দাবি করে আসছেন, তার বাবা একজন নারীবাদী। গত চার দিনেই যেন তার ‘উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত’ দিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ধারাবাহিক এ নারী আক্রমণ শুরু হয়েছে গত শনিবার (৩০ জুলাই) থেকে। সেদিন এবিসি নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইরাকযুদ্ধে নিহত এক মুসলিম আমেরিকান সৈনিকের মাকে আক্রমণ করেন ট্রাম্প।
গাজালা খান নামে ওই মা তার স্বামী অর্থাৎ সৈনিকের বাবা খিজর খানের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে অংশ নেন। কনভেনশনে খিজর খান বক্তৃতা করলেও চুপচাপ ছিলেন গাজালা খান।
কেন তিনি সেদিন নীরবতা পালন করলেন এ প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প বলেন, ‘তার (খিজর খান) স্ত্রীর দিকে তাকান! তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তার কিছুই বলার ছিল না। মনে হয় কিছু বলার অনুমতি নেই তার। আপনি আমাকে বলুন। ’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য কেবল ওই নারীর জন্যই অবমাননাকর ছিল না, অপমানবোধ করেন গোটা আমেরিকার মুসলিম নারীরা। পরে গাজালাও জবাব দেন ট্রাম্পকে। তিনি বলেন, ‘কোনো বাধা-বিপত্তি নয়, আমার সন্তানের মৃত্যুর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি বলেই সেদিন কথা বলিনি। ’
গাজালার এ বক্তব্যে সংহতি জানিয়ে আমেরিকার অন্য মুসলিমরাও ট্রাম্পকে জবাব দেন যে, মুসলিম নারীদের কথা বলতে মানা নেই। এমনকি তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া জবাব দিতে একটি হ্যাশট্যাগও চালু করেন, যেটাতে বলা হয় ‘#ক্যানইউহিয়ারআজনাও’ (তুমি কি এখন আমাদের শুনতে পাচ্ছো)।
ট্রাম্প এখানেই থামলেন না। তার একদিন বাদে সোমবার (১ আগস্ট) ইউএসএ টুডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কর্মজীবী নারীদের আক্রমণ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে ইভানকা যদি তার কর্মস্থলে বসের যৌন হয়রানির শিকার হতো, তবে আমি তাকে নতুন ক্যারিয়ার বা কোম্পানি খোঁজার কথা বলতাম। ’
ফক্স নিউজ প্রধান রজার এইলসের বিরুদ্ধে তার বেশ ক’জন নারী সহকর্মীর ক্যারিয়ার গড়ে দেওয়ার প্রলোভনে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প এ কথা বলেন। ’
কেবল তাই নয়, ট্রাম্প অভিযুক্তকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিষয়ে কিছু না বলে উল্টো রজার এইলসেরই পক্ষ নেন। তাকে একজন ‘ভালো মানুষ’ ও ‘অনেক মেধাবী’ বলেও অভিহিত করেন। এমনকি অভিযোগকারী নারীদেরই উল্টো অভিযুক্ত করে ট্রাম্প বলেন, ‘যে নারীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললো, আমি জানি তাদের কতোটা সহযোগিতা করেছেন তিনি। ’
ট্রাম্প যেন কেবল মুসলিম ও কর্মজীবী নারীদেরই আক্রমণের ছক কষেননি। তিনি প্রকাশ্যেও নারীকে অপদস্থ করার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পের একটি সমাবেশে একজন নারী তার কান্নারত শিশু সন্তানকে নিয়ে যখন কথা শুনছিলেন, তখন চেঁচামেচি করে তাকে বের করে দেন রিপাবলিকান এ প্রার্থী।
ওই শিশুকে কাঁদতে দেখে ট্রাম্প প্রথমে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘বাচ্চাটিকে নিয়ে ভেবো না। আমি বাচ্চাদের ভালোবাসি। একদম ভেবো না। বাচ্চা যে কাঁদছে আমি শুনছি, আমার এটা ভালো লাগে। কী এক বাচ্চা। কী সুন্দর বাচ্চা। একদম ভেবো না। না, ভেবো না। এটা তাগড়া, সুন্দর, স্বাস্থ্যবান এবং যেমনটা আমরা চেয়েছি, তেমন বাচ্চা। ’
কিন্তু ট্রাম্পের এই বিদ্রুপ বুঝতে না পেরে ওই সরলমনা নারী দাঁড়িয়ে থাকলে রিপাবলিকান প্রার্থী তাকে সরাসরিই অপদস্থ করেন। বলেন, ‘আসলে আমি মজা করছিলাম। তুমি এখনই বাচ্চাটাকে নিয়ে বের হয়ে যেতে পারো। ’ তারপর আবার বলতে থাকেন, ‘আমার মনে হয় সে (ওই নারী) ভেবেছে, আমার বক্তৃতাকালে কোনো শিশুকে কাঁদতে দেখে আমার ভালো লাগবে। লোকজন এটাও বোঝে না!’
পরে ওই ৠালিতেই ট্রাম্প আক্রমণ করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে। তিনি উপস্থিত লোকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কি মনে হয়, তার চালচলন প্রেসিডেন্টের মতো? আমার তো মনে হয় না!’
হিলারির চালচলন প্রেসিডেন্টের মতো নয় বলে ট্রাম্প কার্যত তার নারীসত্তাকেই আক্রমণ করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের গত ২৪০ বছরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা সবাই পুরুষ ছিলেন। আবার প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘চালচলন’ নিয়ে কথাটা হিলারির ব্যক্তিসত্তাকেও আক্রমণ হতে পারে ট্রাম্পের।
ট্রাম্পের এ ধরনের নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের পরও তার নারী সমর্থকরা কবে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, তা হয়তো এখনই বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ট্রাম্প যে বরাবরই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সবার কাছে।
এই সপ্তাহের আগে বিতর্কিত ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে ওঠা ট্রাম্প নারীদের ‘মোটা শুয়োর’, ‘কুকুর’ বলেও গালাগাল করেন। এমনকি গর্ভপাতের কারণে নারীদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৬
এইচএ/