ঢাকা: একটি ভিডিও ক্লিপ। পটভূমি কোনো এক আখ ক্ষেত।
আতঙ্ক মেশানো আকুতি নিয়ে তাকাচ্ছে ঘিরে রাখা পুরুষদের চোখের দিকে। কেউ হয়তো সাড়া দেবে, কেউ হয়তো তাকে বাঁচাবে এই শকুনদের থাবা থেকে।
কিন্তু না! তার এই কান্না, এই আকুতি গলাতে পারলো না হিংস্র ওই মানুষরুপী জানোয়ারদের পাষাণ মন। মৃতদেহকে যেভাবে ছিন্নভিন্ন করে খুবলে খায় শকুনের পাল, ঠিক সেভাবেই মেয়েটির ওপর হামলে পড়লো তারা।
না, এটা বলিউডের কোনো ‘গারাম মাসালা’ চলচ্চিত্রের ‘বিশেষ’ দৃশ্যের ক্লিপিং নয়। বরং এটি ভয়ঙ্কর ওই ঘটনার চরম বাস্তব মুহূর্তের ধারণকৃত অংশ।
মাত্র ৫০ কিংবা ১শ’ রুপিতেই এমন ভিডিও ক্লিপিং পাওয়া যাচ্ছে ভারতের বিহার কিংবা উত্তরপ্রদেশের দোকানে দোকানে। এসব এলাকায় এখন আর পর্নো ছবিতে রুচি নেই খদ্দেরদের! তার বদলে চাহিদা বাড়ছে এমন বাস্তব ঘটনার ক্লিপিংয়ের। যোগানেরও তো কোনো অভাব নেই। ধর্ষণ কিংবা গ্যাংরেপ এই এলাকায় অনেকটা মুড়ি মুড়কির মত।
শুধু ধর্ষণেই শেষ নয়। বরং ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা বিক্রির মাধ্যমে দুই পয়সা আয়ও হচ্ছে ধর্ষণকারীদের। বিস্ফোরক এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার পত্রিকার গোপন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদকরা এমন ভিডিওর খোঁজে ঘুরে বেড়ান উত্তর প্রদেশের আগ্রা, বেলানগঞ্জ, বালকেশ্বর, কমলানগর সহ আরও কিছু এলাকা। সেখানকার হাটে বাজারে যে কোনো কম্পিউটার কিংবা সিডির দোকানে সহজেই মিলছে এসব ধর্ষণের ভিডিও ক্লিপ।
সেখানে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণীকে ধর্ষণ করছে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। পাশেই পেটানো হচ্ছে তার ছেলে বন্ধুকে। বার বার মাফ চেয়েও পার পাচ্ছে না ছেলেটি।
পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে দুর্বৃত্তদের একজন। এ সময় হিন্দিতে তরুণীটির কাতর আর্ত চিৎকার ‘ কম সে কম, ভিডিও তো মাত উতরাও’, অর্থাৎ ‘অন্তত ভিডিও তো করো না’।
উত্তর প্রদেশের আগ্রার পুলিশ সুপার ঘুলে সুশীল চন্দ্রভান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, দুর্বৃত্তরা এখন শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা পুরো ঘটনার ভিডিও তুলে রাখছে। এর উদ্দেশ্য হলো, নির্যাতিতা যেন পুলিশের কাছে যেতে না পারে তার পথ রোধ করা, কিংবা ভবিষ্যতে নির্যাতিতাকে ব্ল্যাকমেইল করে একই ধরনের সুবিধা বারংবার আদায় করা।
সম্প্রতি এরকম একটি ঘটনায় আত্মহত্যা করেন ২১ বছরের এক নির্যাতিতা তরুণী। তার ধর্ষণের ভিডিও ছাড়া হয় ইন্টারনেটে। এমনকি মাত্র তিন রুপিতে বাজারে বিক্রি হয় তার নগ্ন ছবি। এ ঘটনার পর লজ্জায় আত্মহত্যা করেন ওই তরুণী।
অনেক দিন ধরেই ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন হচ্ছে ভারত। অবশ্য দিল্লির ‘নির্ভয়া’ ধর্ষণের পর নড়েচড়ে বসেছিলো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
সর্বশেষ দিন কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশের একটি মহাসড়কে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে, সেখান থেকে মা ও মেয়েকে তুলে নিয়ে তাদের স্বজনদের সামনেই ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।
এসব ঘ্টনা কিংবা টাইমস ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদনে এটাই পরিমিত হয় ভারতের ধর্ষণের চিত্র কতটা ভয়াবহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
আরআই