ঢাকা: আসছে নভেম্বরের ৮ তারিখে নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে বেছে নিতে ভোট দেবেন মার্কিন ভোটাররা, তা সবাই জানেন। তবে আরও অন্যান্য বিষয়ও যে এদিন ফয়সালা করবেন ভোটাররা সে বিষয়টি অজানা অনেকের কাছে।
মূলত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যুগপৎভাবে অন্যান্য ভোট প্রদানের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিহিত হয় ‘ডাউন ব্যালট রেস’ হিসেবে।
ডাউন ব্যালট হিসেবে পরিচিত হলেও এর গুরুত্ব এবং আবেদন সংশ্লিষ্ট ভোটারদের কাছে কখনই কম নয়, বরং ক্ষেত্র বিশেষে এর আবেদন ও প্রয়োজনীয়তা প্রেসিডেন্সিয়াল রেস এর থেকেও বেশি।
দেখা যাক কি কি বিষয়ে নির্ধারণ হবে এই ‘ডাউন ব্যালট রেস’এ।
প্রথমেই আসবে সিনেট নির্বাচনের বিষয়টি। মার্কিন সিনেটের ৩৪টি আসনে পছন্দের সিনেটর বেছে নিতে ৮ নভেম্বর ভোট দেবেন মার্কিন ভোটাররা।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটের আসন সংখ্যা একশ’টি। ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন একেকজন সিনেট সদস্য। ইতোমধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৪টি আসনের। এর মধ্যে ২৪টি রিপাবলিকানদের এবং দশটি ডেমোক্রাটদের দখলে।
এই ৩৪টি সিনেট আসনের গুরুত্ব দুই দলের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের থেকে কম নয়। কারণ বর্তমানে নিম্নকক্ষ হাউজে রিপাবলিকানরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সিনেটে খুব অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা।
সিনেটে একশ’ আসনের মধ্যে বর্তমানে ৫৪টি রিপাবলিকানদের দখলে। কিন্তু ৮ নভেম্বরের ভোটে যদি ডেমোক্রাটরা নিজেদের আসন ধরে রাখার পাশাপাশি আর মাত্র চারটি আসন বাগিয়ে নিতে পারে আর হিলারি ক্লিনটন যদি নির্বাচনে জয়ী হন, তবে সিনেটে দুই দলের আসন সমান সমান হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে ডেমোক্রাটরা। কারণ সিনেটে কোনো বিষয়ে দুই দলের ভোট সমান হলে নীতি নির্ধারণী ভোটটি দিতে পারেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আর এখানেই রিপাবলিকানদের যত শঙ্কা।
অনেকের ধারণা ট্রাম্পের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নেতিবাচক ভোটের প্রভাব পড়বে সিনেট নির্বাচনেও। সেক্ষেত্রে নিজেদের সবগুলো সিনেট আসন ধরে রাখা মুশকিল হবে রিপাবলিকানদের জন্য।
এ বিষয়টি সামনে রেখে ইতোমধ্যেই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে রিপাবলিকান শিবিরে। ডাউন ব্যালটের অনেক রিপাবলিকান প্রার্থীই ট্রাম্পের থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখছেন। কারণ ট্রাম্পের প্রতি মানুষের বিরাগের কোপ পড়তে পারে তাদের প্রতি সমর্থনেও। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত তারা।
শুধু প্রেসিডেন্ট বা সিনেটরই নয়, নভেম্বরের ৮ তারিখে নিজেদের পছন্দের গর্ভনরকেও বেছে নেবেন ১২টি অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা।
৩৪টি অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা রাজ্যের বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের ব্যাপারে নিজেদের মতামত দিতে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটেও অংশ নেবেন।
যেমন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি চলচ্চিত্রে পুরুষ অভিনেতাদের বাধ্যতামূলকভাবে কনডম পড়তে হবে কি না সে ব্যাপারে মতামত দেবেন ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররা। কোনো কোনো রাজ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হবে কি না সে ব্যাপারেও ভোটারদের মতামত নেয়া হবে।
এছাড়া ৮ নভেম্বরই কমপক্ষে ২৫টি নগরীতে মেয়র বাছাই করবেন সংশ্লিষ্ট ভোটাররা।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই এদিন অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন মিউনিসিপ্যালিটির ভোট। আমাদের দেশে যা অনেকটা পৌরসভার ভোটের মতন।
এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব আইনসভা বা লেজিসলেচার সদস্য নির্ধারণেও ভোট দেবেন ভোটাররা।
ব্যালেটোপিডিয়া জানাচ্ছে ৮ নভেম্বর দেশটির ৮০ শতাংশ লেজিসলেটিভ আসনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া অনেক রাজ্য কিংবা কাউন্টিতে এমনকি স্কুল বোর্ড সদস্য ও বিচারক নির্বাচিত করার ব্যাপারেও এদিন ভোট দেবেন মার্কিন ভোটাররা। সব মিলিয়ে ৮ নভেম্বরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কর্মযজ্ঞের বিস্তার আসলে আরও অনেক বিশাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টেবর ৩১, ২০১৬
আরআই