ঢাকা: পুরো বিশ্বজুড়ে বইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হাওয়া। সবাই এখন হিসাব-নিকাশ কষছেন, কে হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের পরবর্তী ৪ বছরের বাসিন্দা।
আসলে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কী? ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি পদ্ধতি, এর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই। আমেরিকান জনগণ আগামী ৮ নভেম্বর যে ভোটাভুটিতে অংশ নেবে, সেখানে তারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোট দেবে প্রার্থীর পার্টি মনোনীত এই কলেজ’র সদস্য বা নির্বাচক (ইলেক্টর) মনোনয়নের ব্যালটেও। এই নির্বাচকদের ব্যালটে পড়া টিক চিহ্নই মূলত নির্বাচিত করবে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্টকে।
অর্থাৎ সরাসরি প্রার্থীর ব্যালটে যে ভোট পড়বে সেটা তার জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি হলেও প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তাদের পার্টি থেকে নির্ধারিতসংখ্যক ইলেক্টর নির্বাচিত হওয়ার ভিত্তিতেই। এই পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যার তারতম্যের কারণে। কারণ, কেবল সরাসরি ভোটের হিসাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে জনসংখ্যা অনেক বেশি এমন দু’চারটি রাজ্যের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন, যাতে আর পুরো দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বীকৃতি থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট মিলিয়ে ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৩৮। এই ইলেক্টরের সংখ্যা নির্ধারিত হয় পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য সংখ্যার অনুপাতে। প্রত্যেকটি রাজ্যের সিনেটর সংখ্যা ২ এবং হাউস অব রিপ্রেজেনটেভিসের সদস্য সংখ্যা রাজ্যের জেলাগুলোর সমান সমসংখ্যক। এ হিসেবে ৫০ রাজ্যে সিনেটর ১০০, হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’র সদস্য ৪৩৫ জন এবং ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার জন্য নির্ধারিত ৩ ইলেক্টর মিলিয়ে মোট ইলেক্টর হয় ৫৩৮ জন।
বলাই যায়, নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন (বেসরকারিভাবে) ৯ নভেম্বর সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তির দিকে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি সবার নজর থাকবে ইলেক্টর নির্বাচনের দিকেও।
যেহেতু ইলেক্টর নির্বাচনের দিকে সবার আগ্রহ থাকবে, সেজন্য বাংলানিউজের পাঠকদের রাজ্যপ্রতি ইলেক্টরের সংখ্যা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আলবামা-৯, আলাস্কা-৩, আরিজোনা-১১, আরকানসাস-৬, ক্যালিফোর্নিয়া-৫৫, কোলোরাডো-৯, কানেক্টিকাট-৭, ডেলাওয়ের-৩, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া-৩, ফ্লোরিডা-২৯, জর্জিয়া-১৬, হাওয়াই-৪, ইডাহো-৪, ইলিনয়-২০, ইন্ডিয়ানা-১১, আইওয়া-৬, কানসাস-৬, কেন্টাকি-৮, লুইজিয়ানা-৮, মাইনে-৪, ম্যারিল্যান্ড-১০, ম্যাসাচুসেটস-১১, মিশিগান-১৬, মিনেসোটা-১০, মিসিসিপি-৬, মিসৌরি-১০, মনটানা-৩, নেব্রাস্কা-৫, নেভাদা-৬, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, নিউজার্সি-১৪, নিউ মেক্সিকো-১৪, নিউইয়র্ক-২৯, নর্থ ক্যারোলিনা-১৫, নর্থ ডাকোটা-৩, ওহাইও-১৮, ওকলাহোমা-৭, অরেগন-৭, পেনসিলভানিয়া-২০, রোডে আইল্যান্ড-৪, সাউথ ক্যারোলিনা-৯, সাউথ ডাকোটা-৩, টেনেসে-১১, টেক্সাস-৩৮, উতাহ-৬, ভারমন্ট-৩, ভার্জিনিয়া-১৩, ওয়াশিংটন-১২, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-৫, উইকনসিন এবং উইয়োমিং-৩।
এই ৫৩৮ ইলেক্টর সংখ্যার মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রয়োজন হবে ২৭০ ইলেক্টর ভোটে। কেউ যদি জনপ্রিয়তার ভোটে এগিয়েও থাকেন, ইলেক্টর নির্ধারিতসংখ্যক জয়ী না হলে নির্বাচিত হতে পারবেন না। জনপ্রিয়তার ভোটে এগিয়ে থেকেও হারতে হয়েছে প্রার্থীকে এমন নজিরও ৪ বার আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে।
বেশিরভাগ রাজ্যেই ‘বিজয়ীই সব পাবে’ নীতিতে ওই রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বণ্টন হয়। অর্থাৎ একটি রাজ্যে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলই ওই রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা সব ইলেক্টোরাল ভোট জিতে নেন। তবে মাইনে ও নেব্রাস্কা রাজ্যে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সেখানে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ইলোক্টারাল ভোট ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতি অনুযায়ী ভাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজ্যে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল পায় দু’টি ইলেক্টর ভোট, আবার প্রত্যেক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী রাজনৈতিক দল পায় একটি করে ইলেক্টর ভোট।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এইচএ/