ঢাকা: মার্কিন ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নানান দায়িত্ব পালনকারী হিলারি ক্লিনটন যখন মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গন, এমনকি বিশ্ব রাজনীতিরই অন্যতম বর্ণাঢ্য ও শক্তিশালী চরিত্র; রাজনীতির ময়দানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তখন কোনো নাম-গন্ধই নেই।
২০১৫ সালের শুরুতেই হিলারি যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী, বিপরীতে রিপাবলিকানদের ভরসা হতে পারেন ট্রাম্প, এমন ভরসা রিপাবলিকান শিবিরেই ছিলনা।
প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত হিলারির সঙ্গে ভোটের ময়দানে ট্রাম্প টিকতে পারবেন, সে ভরসা করার মতোও বেশি লোক ছিল না। সেইসঙ্গে নির্বাচনী জরিপসহ সব সূচকই ছিল ট্রাম্পের বিপরীতে।
অথচ দলের ১৬ জন বাঘা বাঘা নেতাকে হটিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকানদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করা ট্রাম্পই হিলারিকে পরাজিত করে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
অভিবাসন, মুসলিম ইস্যু ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনায় পর্যুদস্ত আবাসন ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ট্রাম্পেই ভরসা খুঁজেছেন মার্কিনিরা।
যদিও পৈত্রিক ব্যবসা সূত্রে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী ও ধনকুবের ট্রাম্প ছিলেন রাজনীতিতে হিলারির তুলনায় একেবারেই আনাড়ি।
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন কুইন্সে জন্ম ট্রাম্পের। বাবা ছিলেন নিউইয়র্কের ধনকুবের আবাসন ব্যবসায়ী। ৫ ভাইবোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ।
১৯৬৪ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্স থেকে পান অর্থনীতিতে ডিগ্রি।
ধনকুবেরের সন্তান হয়েও শুরুতে পৈত্রিক প্রতিষ্ঠানে ছোট পদেই যোগ দেন ট্রাম্প। এরআগে বাবার থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। ক্রমে হাতে আসে বাবার ব্যবসা। ১৯৭১ সালে কোম্পানির নাম বদলে রাখেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন।
১৯৭৫ সালে ট্রাম্প লোকসানি প্রতিষ্ঠান হায়াত হোটেল করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নতুন হোটেল নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৮০ সালে হোটেলটি চালু হওয়ার অল্পসময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৭৯ সালে ট্রাম্প ম্যানহাটনের ফিফথ অ্যাভিনিউয়ে জমি ইজারা নিয়ে ২০ কোটি ডলারের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৮২ সালে কমপ্লেক্সের নাম হয় ট্রাম্প টাওয়ার। ১৯৮৪ সালে আটলান্টিক সিটিতে ট্রাম্প নির্মাণ করেন ২৫ কোটি ডলারের ট্রাম্প প্লাজা।
পরে অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হলিডে ইনের শেয়ার কিনে ওই প্লাজায় নির্মাণ করেন হোটেল ও ক্যাসিনো। এরপর হিলটন হোটেলের ক্যাসিনো-হোটেল কিনে নিয়ে ৩২ কোটি ডলার খরচে নির্মাণ করেন ট্রাম্প ক্যাসল। ১৯৯০ সালে চালু করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো ‘ট্রাম্প তাজমহল’। ২০০৪ সালে এনবিসি টেলিভিশনে ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ রিয়েলিটি শো করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান ট্রাম্প।
এদিকে, ধনকুবের ট্রাম্পের ব্যবসায়িক পরিধি মার্কিন মুলুক ছাড়িয়ে মুম্বাই, ইস্তানবুল এবং ফিলিপিন্সেও আসন গাড়ে।
ঝানু এই ব্যবসায়ী বিনোদন ব্যবসাতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএসহ বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন তিনি।
ব্যক্তি জীবনে ট্রাম্প তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী চেক অ্যাথলেট ও মডেল ইভানা জেলনিকোভা। ১৯৯০ সালে সে সম্পর্ক চুকে যায়। ১৯৯৩ সালে মারলা মেপলসকে বিয়ে করেন, সে সম্পর্ক টিকে ছিল ১৯৯৯ পর্যন্ত। ২০০৫ সালে মডেল মেলানিয়া ক্নাউসকে বিয়ে করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার আগ্রহের কথা প্রথম প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করেন তিনি।
২০১৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়া ট্রাম্প ২০১৫ সালের জুনে প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানে শুরু করেন প্রচারণা।
এসময়ে তিনি হয়ে ওঠেন দলের সবচেয়ে বড় দাতা ও তহবিল সংগ্রাহক। ওই বছরের ১৯ জুলাই ট্রাম্প লাভ করেন দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা।
নানান মন্তব্য বিতর্কিত ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সব বিতর্ক পাশ কাটিয়ে মঙ্গলবারের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
এসআর