ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারত যুদ্ধ চায় না, বললেন সুষমা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
ভারত যুদ্ধ চায় না, বললেন সুষমা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ

ভারত-চীন সংকট যুদ্ধে সমাধান হবে না। তাই ডোকালাম সঙ্কটের সমাধান শুধুমাত্র কূটনৈতিক পথেই সম্ভব। তাই ভারত-চীনের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না বলে সংসদকে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাজ্যসভায় ভারত-চীন সংঘাত সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংকটের সমাধানে জন্য ভারত ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রাজ্যসভায় ‘ভারতের বিদেশ নীতি এবং কৌশলগত মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক’ সংক্রান্ত বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। এ সময় ভারত-চীনের মধ্যে চলতে থাকা সংকট নিরসনে ভারত কী নীতি নিচ্ছে, কয়েকজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে সুষমা জানান, ভারত যুদ্ধ চায় না। তাই কূটনৈতিক পথে এবং দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারতের সামরিক সক্ষমতা প্রসঙ্গে সুষমা জানান, ভারতীয় সেনা সব সময়ই যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কিন্তু যুদ্ধ কখনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না। কূটনৈতিকভাবে সমাধান খোঁজার চেষ্টাই হল বিচক্ষণতা। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, বৃহস্পতিবার ডোকালাম নিয়ে ১৪ পাতার দীর্ঘ কূটনৈতিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বেইজিং দাবি করেছে, এরই মধ্যে ডোকালাম থেকে ভারত তার সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। চীন আরো দাবি করেছে, ১৮ জুন ২৭০ জন ভারতীয় সেনা দু’টি বুলডোজার নিয়ে ডোকালামে এসেছিলো। এক সময়ে সেখানে প্রায় ৪০০ ভারতীয় সেনা থাকলেও এখন সেখানে রয়েছেন মাত্র ৪০ জন!

চীনের এই বিবৃতি প্রকাশের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সমস্যা শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫০ জন ভারতীয় সেনা ডোকালামে আছে। এখন পর্যন্ত কোনো সেনা প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির জবাবে জানিয়েছে, ভারত–চীন সীমান্তে শান্তি এবং স্থিতি বজায় রাখাটা দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত। এনিয়ে গত ৩০ জুন প্রকাশিত বিবৃতিতে যা বলা হয়েছিলো, সেটাই ভারতের ঘোষিত অবস্থান।

ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, এ দিনের ঘটনাপ্রবাহ এ ইঙ্গিতই করছে যে উত্তেজনা কমানোর জন্য দু’দেশের পক্ষ থেকেই সক্রিয়তা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিক্রিয়াও কার্যত যথেষ্ট নরম। চীন স্নায়ুর লড়াইয়ে ভারতকে বেশ কিছুটা চাপে ফেলতে পেরেছে।

গণমাধ্যমের দাবি, ডোকালাম সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীনের ওপর মার্কিন চাপ ক্রমশঃ বাড়ছে। অন্যদিকে সামনেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেপ্টেম্বরে চীনে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন।

ফলে দু’পক্ষই উত্তেজনা কমাতে চাইছে। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চীন সফরের সময়েই উত্তেজনা কমানোর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা কূটনীতিকদের।

বেইজিং তার বিবৃতিতে ১৮৯০ সালের চীনা-ব্রিটিশ চুক্তির উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, সেই চুক্তি অনুযায়ী ডোকলাম চীনের অধিকারে এসেছিল। ভারত অবশ্য আগেই এই দাবির বিরোধিতা করেছে। ডোকলামে সড়ক নির্মাণের আগে সীমান্ত সৌজন্যের খাতিরে ভারতকে আগাম জানানো হয়েছিল বলেও দাবি চীনের। ভারত যদিও এখন পর্যন্ত এ কথা স্বীকার করেনি।

ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ভুটানকে পাশে নিয়ে চীনের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করার পথ থেকেও ক্রমশ পিছু হটতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। কারণ কিছুটা গোপনে ভুটানও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে চলেছে। ডোকলাম নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ভুটানের রাষ্ট্রদূত দিল্লির চীনা দূতাবাসে সে দেশের সেনার প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৭
আরএম/এএটি/এমএইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।