ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘শাস্তি’ দিতে পারে পশ্চিমারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৭
মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘শাস্তি’ দিতে পারে পশ্চিমারা রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের মূল হোতা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং লাইং

রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষত শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ টার্গেট করার বিবেচনা করছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।

ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কয়েক ডজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রোববার (৮ অক্টোবর) রাতে এই খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। এখনও কোনো কিছুই সিদ্ধান্ত না হলেও এ সংক্রান্ত অনেক বিষয়ই আলোচনা হয়েছে বলে জানাচ্ছে তারা।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সক্রিয় এই আলোচনায় উঠে এসেছে, কিভাবে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাটকীয়ভাবে বিতাড়িত করার ঘটনা পশ্চিমা নীতি-নির্ধারকদের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে। আলোচনায় রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।

এই সংকটের দায় আন্তর্জাতিকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র ওপর চাপানো হলেও কিছু পশ্চিমা কূটনীতিক এর আড়ালের চিত্রও দেখছেন। তারা মনে করেন, সামরিক বাহিনীর সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের ক্ষমতা সু চি’র বদলে কার্যত সশস্ত্র বাহিনীর হাতেই রয়েছে। পুরো অভিযানটিই তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে।

আগামী ১৬ অক্টোবর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনায় বসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পরিষদ। যদিও সেই আলোচনার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর শিগগির কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে কি-না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী আলা তোরনায়েস জানান, কোপেনহেগেন রোহিঙ্গা সংকটকে আলোচ্য ধরে কাজ করছে। ডেনমার্ক চাইছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ বাড়াতে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মিয়ানমার সংক্রান্ত বিবেচনার বিষয়ে জ্ঞাত ওয়াশিংটনভিত্তিক দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং লাইংসহ তার নেতৃত্বে আরও বেশ ক’জন শীর্ষ জেনারেল এবং রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে জড়িত বৌদ্ধ সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে ‘টার্গেট নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনাধীন।

ওই কর্মকর্তাদ্বয় জানান, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সংশ্লিষ্টদের সম্পত্তি ব্যবহারে বিধিনিষেধ, যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণ ও তাদের সঙ্গে মার্কিনিদের ব্যবসায়িক লেনদেন নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ হতে পারে। এ বিষয়ে ইউরোপের বিভিন্ন মিত্র দেশ, জাপান, দক্ষিণ এশিয়ার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সতর্কভাবে এগোচ্ছে ওয়াশিংটন।

ইয়াঙ্গুনে দায়িত্বরত একজন জ্যেষ্ঠ ইউরোপিয়ান কূটনীতিক বলেন, সংকট মোকাবেলায় তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করছে পশ্চিমা দেশগুলো। পশ্চিমারা এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে যে, সংকট তৈরির জন্য দায়ী সেনাবাহিনী, বিশেষত বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ লাইংকে ‘শাস্তিমূলক টার্গেট পদক্ষেপে’র মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন।

পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, প্রথমেই মিয়ানমারের ওপর প্রতীকী শাস্তি আরোপ করা হবে। যেমন গত বছর ব্রাসেলস, বার্লিন, ভিয়েনাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভ্রমণে যাওয়া দেশটির সেনাপ্রধানের পরবর্তী ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। যেন তারা সংকট সমাধানে আলোচনায় বসে। তারপর অগ্রগতি না দেখা গেলে পরবর্তী বিবেচনায় যাবে পশ্চিমা মিত্ররা।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সরকারি স্থাপনায় হামলার অজুহাতে ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে পুরোপুরি রোহিঙ্গা-শুদ্ধি অভিযান শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। অত্যাচার-নিপীড়ন করে দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়েছে অর্ধ মিলিয়ন বা পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে। জাতিসংঘ এই অভিযানকে উল্লেখ করেছে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।