ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গ্রামের পর গ্রাম জ্বালানোর প্রমাণ দিলো এইচআরডব্লিউ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
গ্রামের পর গ্রাম জ্বালানোর প্রমাণ দিলো এইচআরডব্লিউ স্যাটেলাইট ছবিতে মংডুর আশপাশের এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর অংশের ২৮৮ গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ দিলো মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এসব গ্রামে ২৫ আগস্টের আগে বসতভিটা ছিল, ছিল সাজানো-গোছানো সংসার; যার সবই এখন অতীত।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) নতুন করে প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্র বিবৃতিতে পাঠিয়ে এইচআরডব্লিউ এ প্রমাণ দিয়েছে। এর আগে মধ্য সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইনে রোহিঙ্গা-গ্রামগুলোতে সহিংসতার স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে।

সেখানেও ফুটে ওঠে ধ্বংসযজ্ঞ।

নতুন করে তুলে ধরা চিত্রে এইচআরডব্লিউ বলছে, রাখাইনে অব্যাহত অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, গণধর্ষণের জেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পাশের দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। যৌক্তিক কারণেই তারা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

তারা এও বলছে, সেনাবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে’ই ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।  

এইচআরডব্লিউ’র ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, এই চিত্রই প্রমাণ করে কেন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে স্রোতের মতো বাংলাদেশে ঢুকেছে। বার্মিজ সেনারা গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এতে মানুষ আসলে বাধ্য হয়েছে।

তারা তুলে ধরেছে নতুন করে রাখাইনে অগ্নিসংযোগের তথ্যও। ৫ সেপ্টেম্বরের পর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নতুন করে আগুন দিয়ে মানুষ তাড়ানো হয়েছে, বলছে সংস্থাটি।

ইতোপূর্বে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেছিলেন, স্যাটেলাইটের পাওয়া ছবি, ভিডিও অকাট্য প্রমাণ। সেখানে জাতিগত নিধন চালিয়ে পুরো অঞ্চল রোহিঙ্গামুক্ত করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্যাতিত এ জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরানোর পরিবেশ তৈরির কার্যক্রম জোরদার করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় ইউএনএইচসিআর, মানবতাবিষয়ক কাজে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী কার্যালয় (ওসিএইচএ) এবং আইওমের যুক্ত বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সমস্যা নিয়ে আগামী সোমবার (২৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই তিন সংস্থার আয়োজনে হতে যাচ্ছে ‌‘প্লেজিং কনফারেন্স’। যার উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কুয়েত সরকার।

আইওএম বলছে, সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে থেকেই অবশ্য আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকছে বাংলাদেশে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে সংখ্যাটা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে না বলে নতুন আপডেট পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

রোহিঙ্গা-গ্রামে তাণ্ডব, স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭/আপডেট ১৫৫০ ঘণ্টা
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।