ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাক্কাকে আইএস-মুক্ত করার যুদ্ধজয়ী নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
রাক্কাকে আইএস-মুক্ত করার যুদ্ধজয়ী নারীরা আইএসের বিরুদ্ধে জয়ী তিন যোদ্ধা আভরিল দিফরাম, শানদা আফরিন ও উলাত রমিন

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা দখলের পর বর্বর জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) কার্যত সেখানে মধ্যযুগীয় অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু করেছিল। দ্বিমত পোষণকারীকে জবাই থেকে শুরু করে কিশোরী-তরুণীসহ নারীদের অপহরণ করে যৌনদাসী হিসেবে বাজারে বেচে দেওয়া, সব রকমের অপরাধ করেছিল তারা।

আইএসের বর্ণনাতীত অত্যাচার-নিপীড়নই মনের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল কুর্দি নারীর। এই অত্যাচার-নিপীড়ন প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়ান তারা।

কুর্দি বাপ-চাচা-ভাইদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে যুদ্ধে নেমে পড়েন। নারী-পুরুষের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই পতন লিখতে শুরু করেছে আইএসের। এরইমধ্যে নিজেদের একসময়ের রাজধানী ও সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি রাক্কা থেকে উৎখাত হয়েছে আইএস। ইরাকের বেশিরভাগ এলাকা থেকেই বিতাড়িত হয়ে গেছে গোষ্ঠীটি।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাক্কায় আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণার প্রাক্কালে উল্লাস প্রকাশ করেন যোদ্ধা নারীরাও। সেখানেই তারা জানান, কেন অস্ত্র হাতে নিলেন, কেন নেমে পড়লেন প্রাণ বাজি রাখার লড়াইয়ে।

এই যুদ্ধজয়ী নারীরা জানান, কুর্দিদের মুক্তি এবং নারীদের স্বাধীনতা আনতে তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। কারণ, তারা দেখেছেন—আইএস এলাকা দখলের পর কুর্দি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের নানা কায়দায় নির্যাতন করেছে। পর্দার নামে তাদের সূর্যের আলো দেখতে দেওয়া হতো না, এর ব্যত্যয় ঘটলে জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করা হতো, অপহরণ করে যৌনদাসী হিসেবে আইএসের কাছে বেচে দেওয়া হতো। উত্তর ইরাক থেকে অসংখ্য কুর্দি-ইয়াজিদি নারীকে এই রাক্কায় এনে যৌনদাসী হিসেবে নির্যাতন করা হতো।

রাক্কায় বিজয় ঘোষণার পর কুর্দিদের প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নারী যোদ্ধারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় তারা স্মরণ করেন যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া নারীদের।

লড়াইয়ের ময়দানে কুর্দি বাহিনীর নারী যোদ্ধারা
এই যুদ্ধজয়ী নারীদের একজন শানদা আফরিন। বিগত চার বছর ধরেই আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন তিনি। আফরিন বলেন, আমাদের নেতৃত্ব নারীমুক্তি এনে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সেজন্য আমরাও এই মুক্তির লড়াইয়ে যোগ দিয়েছি। আমাদের এই লড়াই কেবল আইএসের বিরুদ্ধেই ছিল না, এ লড়াই নারীর প্রতি গোঁড়ামির বিরুদ্ধেও।

আরেক যোদ্ধা আভরিল দিফরাম। ২০ বছর বয়সী এই তরুণী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন তার কৈশোরে, ১৭ বছর বয়সে। যুদ্ধে প্রাণ হারানো সহযোদ্ধাদের স্মরণ করে আভরিল বলেন, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য আমাদের এ যুদ্ধ চলছে এবং চলবে।

২৪ বছর বয়সী নারী উলাত রমিন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন দেড় বছর আগে। তিনি বলেন, কুর্দিদের মুক্তির জন্য আমি লড়াই করছি। লড়ছি অবিচারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়পরায়ণতার জন্য। বিশেষত নারীমুক্তি এনে দেওয়া আমাদের এ লড়াইয়ের উদ্দেশ্য।

আইএসের সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল দখলের পর থেকেই লড়ছেন আরেক নারী সোজদার দেরিক। তিনি বলেন, যে নিপীড়নে জর্জরিত আমাদের মাতৃভূমি এবং আমাদের নারীরা, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এই আইএস নারীকে মানুষই মনে করে না, মনে করে কেবল যৌনতার উপাদান হিসেবে। আমরা এসব অন্ধকার দূর করতে লড়াই করছি।

আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সিরিয়ায় লড়াইরত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে নানাভাবে আইএসবিরোধী যুদ্ধে লড়ছেন নারীরা। এই সংগঠিত পরিকল্পনামাফিক যুদ্ধই নিয়ে আসছে বিজয়ের বার্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।