ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ‘রাত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ‘রাত’ নাসার স্যাটেলাইট রেডিওমিটারের ছবিতে রাতের বেলা আকাশ থেকে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ

একসময় বিশ্ব ছিল গ্রাম, মনুষ্য সভ্যতা আধুনিকতায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নগরায়ন। আর নগরায়নের ফলে এই গ্রহ হয়ে উঠতে শুরু করেছে ‘বিশ্ব শহর’। এই ‘শহরের বিশ্বে’ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আলোর ঝলকানি। আর তার ফল?

‘ফল’ হলো—পৃথিবী নামক গ্রহটার মধ্যে যে ‘নৈঃশব্দের নিশি’ ছিল, তা হারিয়ে যেতে বসেছে। নিশীথে একদা এই পৃথিবী অন্ধকারে নৈঃশব্দে ঘুমোলেও এখন জেগে থাকে লাল-নীল-সাদা আলোর ঝলকানিতে।

এই আলোর কারণে গভীর রাতেও পৃথিবীর আকাশ থেকে বোঝা যায়, কোন এলাকা ঘুমোচ্ছে, কোন এলাকায় নামতে পারছে না নৈঃশব্দের নীরবতা।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কিছু ছবি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা শেষে পৃথিবীর ‘রাত’ হারিয়ে ফেলার কথাটি বলেছেন একদল গবেষক। পোৎসদ্যাম-ভিত্তিক জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের গবেষকদের পরিচালিত এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক ‘সায়েন্স জার্নালে’।  

রাতের বেলা পৃথিবীর ঔজ্জ্বল্য পরিমাপে নাসার ব্যবহৃত স্যাটেলাইট রেডিওমিটার থেকে তথ্য-উপাত্তগুলো ঘেঁটেছেন গবেষকরা। গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমেই তীব্রভাবে বাড়তে থাকা কৃত্রিম আলোর কারণে অনেক দেশ থেকেই ‘রাত’ হারিয়ে যাচ্ছে।

গবেষণা অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবী গ্রহে প্রতিবছরে কৃত্রিম ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে ২ শতাংশ করে। আর এতে গ্রহের উদ্ভিদ, প্রাণিকূল ও মনুষ্যজাতির ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।

সবচেয়ে আলোকজ্জ্বল মিশরের নীল নদ সংলগ্ন এলাকা
গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের ঔজ্জ্বল্যের পরিবর্তনটা দেশের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো সমান সমান ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। রাতের ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও। অর্থাৎ যেদিকটায় উন্নতির ছোঁয়া লাগছে, সেদিকটায়ই বাড়ছে কৃত্রিম আলোর ঝলকানি।

গবেষণা অনুযায়ী, কেবল ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে কমেছে রাতের ঔজ্জ্বল্য।

রাত্রিবেলা ধারণকৃত এসব ছবিতে পৃথিবীর শহরগুলোর আলোয় আলোয় সংযুক্তিকে মাকসড়ার জালের মতো সুন্দর দেখালেও মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য এই কৃত্রিম আলো মঙ্গলজনক নয় বলেও উল্লেখ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।

এর আগে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘নেচারে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম আলো উদ্ভিদের পরাগায়নের জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছে। এর ফলে নিশাচর পোকামাকড়ের প্রজনন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছরই প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, নগরে আলোকসজ্জা নিশাচর পরিযায়ী পাখির আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন আনছে।

কৃত্রিম আলোর এমন প্রভাবের বিষয়ে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের প্রধান গবেষক ক্রিস্টোফার কিয়াবা বলেন, মানুষ আমাদের পরিবেশের ওপর যে নাটকীয় দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কৃত্রিম আলোর এই প্রাথমিক প্রভাব।

এরইমধ্যে ‘জোছনাবিলাস’ বা ‘জোছনায় অবগাহন’ শব্দগুলো অপরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্মের কাছে। ভর নিশীথে গাঁয়ের রাস্তার কিনারে অথবা বাড়ির উঠোনে বসে কিংবা ছাদে দাঁড়িয়ে ভরা পূর্ণিমার আলোয় গা ভাসানোর অনুভূতি মেলে না সহজে। গবেষণার ফল বিবেচনায় নিলে এ প্রশ্নই সামনে আসে— নাগরিক কোলাহল আর আলোর ঝলকানি কি তবে ধীরে ধীরে ঝাপসা করে দেবে রাতের পাহারাদার চাঁদকেও?

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।