শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন। গত বছরের জুলাইয়ে নওয়াজকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা’ করা হলে পদত্যাগ করেন তিনি।
আদালতের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, নওয়াজকে সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ ৬২ (১)(এফ)’ অনুযায়ী সরকারি দফতরে ‘আজীবন অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষিত হয়েছে।
রায় ঘোষণাকালে বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেন, সংসদ সদস্য বা সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে ‘অনুচ্ছেদ ৬২ (১)(এফ)’ অনুযায়ী যে অযোগ্যতার রায় ঘোষণা হবে, তা আজীবনের জন্য কার্যকর হবে। এ ধরনের দণ্ডপ্রাপ্তরা সারাজীবন নির্বাচনে লড়তে পারবেন না।
প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার রায় ঘোষণাকালে বলেন, পাকিস্তানের জনগণ একজন সচ্চরিত্রের নেতার দাবিদার।
২০১৬ সালের এপ্রিলে পানামা পেপার্সে প্রকাশিত লাখ লাখ নথিতে বিশ্বের শত শত রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের গোপন সম্পদের তথ্যের পাশাপাশি নওয়াজ ও তার পরিবারের নামও আলোচনায় আসে। এরপরই নওয়াজের পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামেন প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান।
বেশ কিছু দিন রাজধানী ইসলামাবাদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে পরে মাঠের আন্দোলন থেকে সরে এসে নওয়াজকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে ইমরানের দল। সেই মামলায় ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রাথমিক শুনানি হলে বিভক্ত রায় দেন আদালতের বিচারপতিরা। এ কারণে তখন উতরে যান নওয়াজ।
তবে সেসময় নওয়াজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গভীর অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই তদন্ত দল অনুসন্ধান শেষে আদালতে নথিপত্র উপস্থাপনের পর ২৮ জুলাই নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন আদালত।
পানামা পেপার্সের নথি অনুযায়ী, সেখানকার ল’ ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকা’র মাধ্যমে শত শত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গোপনে সম্পদ আয় করে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে রেখেছেন। ফাঁস হওয়া ওই সাড়ে ১১ লাখ নথির মধ্যে নওয়াজের সন্তান মরিয়াম, হাসান ও হুসেইনের নামে ৮টি অফশোর কোম্পানি (করফাঁকি দিতে তথ্য গোপন রেখে সুবিধাজনক দেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি) থাকার তথ্যও আসে।
কিন্তু অভিযোগ প্রথম থেকেই উড়িয়ে দিয়ে নওয়াজ ও তার স্বজনরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ও রাজনৈতিক প্রভাবিত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো শেষ করতে পারেননি। ১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালে দুইবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি নওয়াজও। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মুসলিম লিগের এই সরকারপ্রধানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বছরখানেক আগে সরে যেতে হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন শহীদ খাকান আব্বাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এইচএ