ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্তদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার কারণে তুমুল সমালোচিত-নিন্দিত শিল্পমন্ত্রী চন্দ্র প্রকাশ গঙ্গা ও বনমন্ত্রী লাল সিং শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) রাতে পদত্যাগ করেন। ওই অভিযুক্তদের আটক করার পর এর প্রতিবাদে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সমাবেশের আয়োজন করলে সেখানে গিয়ে বক্তৃতা করেন চন্দ্র প্রকাশ ও লাল সিং।
কিন্তু সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তারা। খোদ বিজেপির অংশীদারিত্বের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিই এ দুই মন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, সরকারে বিজেপি নেতাদের নেতৃত্ব ক্রমেই অসমর্থনযোগ্য হয়ে উঠেছে।
আসিফা বোনো নামে ওই শিশুকে গণধর্ষণ ও হত্যায় তোলপাড় চলছে ভারতজুড়েই। বিচার দাবিতে রাজনীতিক, সুশীল সমাজের নেতা থেকে শুরু করে কলিউড-টলিউড-বলিউডের তারকারা পর্যন্ত সোচ্চার হয়েছেন। শুরু হয়েছে ‘জাস্টিস ফর আসিফা’ (#JusticeForAasifa) হ্যাশট্যাগ প্রচারণাও।
গত ১০ জানুয়ারি কাশ্মীরের কাঠুয়া শহরের রাসানা এলাকা থেকে আসিফাকে অপহরণের পর সপ্তাহখানেক একটি উপাসনালয়ে আটকে রেখে গণধর্ষণ এবং শেষে হত্যা করা হয়। ১৭ জানুয়ারি রাসানার একটি জঙ্গলে তার মরদেহ পাওয়া যায়। বিষয়টি আলোচনায় আসে সম্প্রতি ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর। এ ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তা সনজি রাম, পুলিশের বিশেষ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া, সুরেন্দ্র বর্মা, আনন্দ দত্ত ও তিলক রাজ, সনজি রামের ভাগনে (ছদ্মনাম রামু, অভিযোগপত্রে বয়স ১৯ বছর বলা হলেও সংবাদমাধ্যম ১৫ বছর দাবি করে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না), তার বন্ধু পারবেশ কুমার (মানু) ও রামের ছেলে বিশাল জঙ্গোত্রা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৬০ বছর বয়সী সনজি রামই পুরো ঘটনাটির মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী। যে উপাসনালয়ে মেয়েটিকে অপহরণ করে বন্দি রাখা হয় এবং ধর্ষণ করা হয়, সেটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এই সনজি রামই। আর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল রামু, মানু, বিশাল এবং পুলিশ কর্মকর্তা দীপক। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা দীপক মেরে ফেলার আগে আরও একবার ধর্ষণ করতে চান আসিফাকে।
ঘটনার বর্বরতা স্তম্ভিত করেছে বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে বলিউডসহ সব চলচ্চিত্রপাড়ার কলা-কুশলীদের। বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) রাতেই আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতির মিছিল করেন রাহুল। সেখানে যোগ দেন সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে টুইটারেও চলছে প্রতিবাদের ঝড়। রাহুল গান্ধী এ নিয়ে টুইট করেন, ‘এমন অপরাধীদের কেউ কিভাবে পারে আড়াল করতে? আসিফার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ, এই অপরাধের শাস্তি না হয়ে পারে না। একটি নিষ্পাপ বাচ্চার প্রতি যে অকল্পনীয় নৃশংসতা হলো, সেটাতেও যদি আমরা নিজেদের রাজনীতির প্রভাব খাটাই, তাহলে আর কী বলা যায়?’
টুইটারে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন অভিনেতা-রাজনীতিক-ক্রীড়াবিদরা, যাদের মধ্যে রয়েছেন ড. কামাল হাসান, জাবেদ আখতার, অক্ষয় কুমার, করণ জোহর, সানিয়া মির্জা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রীতেশ দেশমুখ, ফারহান আখতার, গৌতম গম্ভীর, আনুশকা শর্মা, তামান্না ভাটিয়া, সোনম কাপুর, পরিণীতি চোপড়া, হুমা কোরেশী, কালকি কোয়েচলিন, নুসরাত জাহান, মিমি, কৃতী শ্যানন, এশা গুপ্তা, বিশাল দাদলানি, মানুষী চিল্লাররা।
এ ঘটনা নিয়ে এতো দিন মুখ না খুললেও বিক্ষোভের আগুন ছড়াতেই বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ টুইট করেন, ‘আসিফাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলাম। কিন্তু বিচার ওকে পাইয়ে দিতেই হবে। ’
এরপর সন্ধ্যায় দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মুখ খোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীই। নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘গত দু’দিনে যা শুনেছি (ধর্ষণের ঘটনা), তা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। একটি দেশ এবং একটি সমাজের বাসিন্দা হিসেবে আমরা সবাই লজ্জিত। অপরাধী কেউই ছাড় পাবে না। ’
কেবল কাশ্মীর নয়, উত্তর প্রদেশের উন্নাও শহরে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগেও কাঁপছে বিজেপির রাজ্য সরকার। ওই কিশোরীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত খোদ বিজেপিরই বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেনগার। প্রায় ১০ মাস আগের এ অভিযোগ এতোদিন চাপা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এসে ঠেকেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের দরজায়। সিবিআই শুক্রবার পাকড়াও করে ফেলেছে কুলদীপকে। যদিও বিচার চাইতে চাইতে মাঝে মারা যান ওই কিশোরী বাবা। এই মৃত্যু নিয়েও সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির চলন্ত বাসে নির্ভয়া ছদ্মনামে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুরো ভারতে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে অবশ্য ওই ঘটনার ৬ অভিযুক্তকে সাজা দেওয়া হয়। এরমধ্যে চারজনেরই হয় মৃত্যুদণ্ড।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এইচএ/
** ৮ বছরের শিশুকে গণধর্ষণের পর হত্যা, ভারতজুড়ে তোলপাড়