বুধবার (২৫ এপ্রিল) মার্কিন পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের সমন্বিত পরিষদ কংগ্রেসে বক্তৃতাকালে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টের ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘নিজেকে দুনিয়া থেকে ছিন্ন করার নীতি’কে (আইসোলেশনিজম) ভর্ৎসনা করে ম্যাক্রোঁ বলেন, এ ধরনের নীতি বৈশ্বিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত।
ইউরোপের দ্বিতীয় প্রধান প্রভাবশালী রাষ্ট্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন ট্রাম্পেরই আমন্ত্রণে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ এবং এ বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে তাদের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ উপহার দেওয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় প্রথমেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে গৃহীত নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তুলে ধরেন বৈশ্বিক বাণিজ্য, ইরান ও পরিবেশসহ নানা ক্ষেত্রে নিজের অভিমত।
ট্রাম্পের কট্টর জাতীয়তাবাদ এবং সবকিছু থেকে সরে আসার নীতির (আইসোলেশনিজম ও উইথড্রয়াল) বিষয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, এসব নীতি হয়তো আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে) ভয় কাটানোর চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু বিশ্ববাসীর জন্য দরজা বন্ধ করে দিলেই বৈশ্বিক পরিবর্তন থমকে যাবে না। এই নীতি আমাদের নাগরিকদের শান্ত করবে না, বরং তাদের ভয়কে আরও উসকে দেবে।
‘আমরা এমন কোনো বেপরোয়া গোঁড়া জাতীয়বাদী কর্মকাণ্ড হতে দিতে পারি না, যাতে বৃহৎ সমৃদ্ধির আশায় বুক বেঁধে রাখা বিশ্ব কেঁপে ওঠে। ’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করার বহুপক্ষবাদ (মাল্টিলেটারালিজম) তৈরি করেছিল, এখন দরকার এই নীতিকে নতুন করে একবিংশ শতকের বিশ্বপরিবার গড়ার উপযোগী করে তোলা।
‘যদি বিশ্বজুড়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা নতুন হুমকিকে পশ্চিমা নেতৃত্ব না দেখার ভান করে, তবে জাতিসংঘ ও ন্যাটো সামরিক জোট তাদের কর্তব্য পালনে সক্ষম হবে না বলে মনে হয়। ’ বলেন ম্যাক্রোঁ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ম্যাক্রোঁর এ ভাষণকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছে। সিএনএন বলেছে, ‘ট্রাম্পিজম’কে তুলোধুনো করেছেন ম্যাক্রোঁ। আরেকটি সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যে, ক্ষ্যাপাটে ট্রাম্পকে কিভাবে সামলাতে হয়, তা মুন্সিয়ানার সঙ্গে দেখিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। যেমন, ‘পরিস্থিতি বুঝে তোষামোদ করো, আবার যুক্তি তুলে ধরে চিৎকারও করো’।
ট্রাম্প নির্বাচনের আগে-পরে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের নিজের দলে ভেড়াতে ‘আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ করে তোলো’ (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) শীর্ষক নীতি নিলেও সেখান থেকেই শব্দ ধার নিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘চলুন আমরা বলি, মেক দ্য আর্থ গ্রেট অ্যাগেইন (বিশ্বকে আবার শ্রেষ্ঠ করে তোলো)’।
তার এই ভাষণ শেষ হতেই তুমুল করতালি বাজতে থাকে কংগ্রেসে। কংগ্রেসের অনেক নেতাই তখন বলতে থাকেন, এটা মার্কিন কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এইচএ/