আগামী ১২ মে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে অনুষ্ঠিত হবে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এতে ৩৯ বছর বয়সী জাইদি লড়বেন প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদরের নেতৃত্বাধীন সদরিস্ট মুভমেন্ট ও ইরাকি কমিউনিস্ট পার্টিসহ ছয় দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট সা’ইরোন এর প্রার্থী হিসেবে।
নির্বাচনী প্রচারণায় জাইদি দুর্নীতি দমন, বৃহত্তর সমৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছেন। তবে তার অনুসারীরা বেশি বেশি প্রচার করছেন বুশকে জুতা মারার সেই ‘বাহাদুরি’র ছবি ও ভিডিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে বেশ তৎপর এই সাংবাদিকের সমর্থকরা।
নির্বাচনে জিততে পারলে সরকারপ্রধান হওয়ারও ইচ্ছে আছে এই সাংবাদিকের। সেজন্য নির্বাচনী জোটের সঙ্গে সমঝোতা চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সাদ্দাম হুসেইন প্রশাসনের কাছে মারণাস্ত্র থাকার ধুয়া তুলে ২০০৩ সালে ইরাকে সামরিক হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট। এক মাস দেড় সপ্তাহের এ অভিযানের পর দেখা যায়, তেমন কোনো অস্ত্রই ছিল না ইরাকে। কিন্তু মার্কিন বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় প্রাণ যায় হাজার হাজার নিরীহ ইরাকির। এই যুদ্ধের পর জাতিগত বিভাজন ছড়িয়ে পড়ে ইরাকজুড়ে, মাথাচাড়া দেয় জঙ্গিগোষ্ঠী, যার মধ্যে সবশেষ ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
ইরাককে ‘নিঃশেষ’ করে দেওয়ার জন্য বুশ প্রশাসনকে দায়ী করে থাকে দেশটির জনগণ। ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাগদাদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নূরি আল মালিকীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে বুশের ওপর সেই ক্ষোভই ঝাড়েন সাংবাদিক জাইদি। তিনি ভর সংবাদ সম্মেলনেই জুতাজোড়া খুলে নিক্ষেপ করেন বুশের দিকে। যদিও বসে পড়ে রক্ষা পান ‘যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট’। সেসময় জাইদি চিৎকার করতে করতে বুশকে বলেন, ‘তুমি ইরাককে শেষ করে দিয়েছো, তুমি ইরাকিদের মেরে ফেলেছো। এটা (জুতা) ইরাকিদের পক্ষ থেকে তোমার জন্য শেষ চুমু, হে কুকুর!’
তৎক্ষণাৎ নিরাপত্তা বাহিনী জাইদিকে আটক করে নিয়ে যায়। প্রায় ৯ মাস পর তিনি কারামুক্ত হন। কিন্তু এর মধ্যে জাইদিকে কারাগারে নির্যাতন করা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। কারামুক্তির পর জাইদি লেবাননের বৈরুতে চলে যান। সেখান থেকে দু’মাস আগে ইরাকে ফেরেন।
জাইদি নির্বাচনী প্রচারণার এক অনলাইন বার্তায় বলেন, আপনারা আমাকে অনেক আগে থেকে যেভাবে চেনেন, আমি সবসময় শোষিতদের পক্ষে এবং শোষকদের বিপক্ষে।
সেই ঘটনার বিষয়ে জাইদি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, আমেরিকা বা আমেরিকানদের নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমার বোঝাপড়টা সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের সঙ্গে। তিনি আমার দেশ দখল করে আমার জনগণকে নির্বিচারে মেরেছেন।
বুশকে বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার দিয়ে জাইদি বলেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই, তবে প্রথম কাজ হবে আমেরিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাকিদের প্রতি ক্ষমা চাইতে বলা। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ইরাকিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং বুশকে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা নেবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৮
এইচএ/