ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গোলান মালভূমি ইসরায়েলের বলে স্বীকৃতির চিন্তা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
গোলান মালভূমি ইসরায়েলের বলে স্বীকৃতির চিন্তা ট্রাম্পের

গোলান মালভূমি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে যে নীতি অনুসরণ করে আসছে, তা থেকে সরে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিক জানিয়েছেন, তার প্রশাসন ওই অঞ্চলটিকে ইসরায়েলের বলেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) নিজের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় এই ভাবনার কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে এবং কৌশলগত কারণে গোলান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েলের উত্তরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত গোলান মালভূমির আয়তন প্রায় ১২শ’ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৬৭ সালে আরব জোটের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এই মালভূমি দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে সিরিয়া এই অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে নিতে চাইলেও তাদের হটিয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

এরপর ১৯৮১ সালে ইসরায়েল সেখানে নিজেদের আইন ও শাসন বলবৎ করার ঘোষণা দিলেও আন্তর্জাতিকভাবে তা স্বীকৃতি পায়নি।

পরে সিরিয়া-ইসরায়েল দু’পক্ষেরই মতৈক্যে গোলানে অসামরিক জোন ঘোষিত হয়, যেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু তারপরও ওই অঞ্চল নিয়ে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা রয়েই গেছে। গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের অবৈধ বসতিএর মধ্যে চলতি দশকের শুরুর দিকে সিরিয়া ‍গৃহযুদ্ধের কবলে পড়লেও গোলান নিয়ে ছাড় দেয়নি দেশটির সামরিক বাহিনী। যুদ্ধাবস্থা থেকে সিরিয়ার বেরিয়ে আসার প্রাক্কালে গোলান মালভূমি নিয়ে ট্রাম্পের ‘নতুন’ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, যখন সিরিয়াকে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য ইরান ষড়যন্ত্র করে আসছে, তখন গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন ট্রাম্প।  

তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণায় হতাশ তার দেশের সাবেক কূটনীতিকরা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বর্তমানে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স নামে একটি থিংক-ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড হ্যাস বলেন, ‘ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একেবারেই একমত নই। কারণ এভাবে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোল্যুশনের লঙ্ঘন হবে। রেজোল্যুশন অনুসারে যুদ্ধের পর কোনো অঞ্চল দখল করা যাবে না। ’

তিন বছর আগে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইসরায়েল কখনো গোলান ছাড়বে না। তার এই ঘোষণায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রস্তাব উঠলে সেটির পক্ষেই ভোট দেয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন।

তাছাড়া সিরিয়াও সবসময়ই বলে আসছে, যেহেতু গোলান তাদের অঞ্চল ছিল এবং যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে ঢুকে পড়েছে, সেহেতু তারা ওই অঞ্চল থেকে পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো শান্তি চুক্তিতে যাবে না দামেস্ক। এ বিষয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি সংলাপ আয়োজন হলেও তা ভেস্তে যায়। ২০০৮ সালে তুরস্কও মধ্যস্থতা করে গোলান নিয়ে বিবাদের মীমাংসা করতে চেয়েছিল। গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ট্যাংক নিয়ে অবস্থানজানা যায়, গোলানে এখন প্রায় ৩০টি ইসরায়েলি বসতি রয়েছে, যেখানে ২০ হাজারের মতো মানুষ বাস করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইসরায়েলিদের এই বসতি অবৈধ। গোলানে ২০ হাজারের মতো সিরিয়ানও রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই দ্রুজ আরব। যুদ্ধের সময় এরা গোলানেই রয়ে গিয়েছিলেন।

২০১৭ সালে ট্রাম্প একই কায়দায় তার দেশের দশকের পর দশক ধরে অনুসৃত নীতি থেকে সরে এসে তেলআবিবের পরিবর্তে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বসেন।

তার ওই ঘোষণার আগে মার্কিন প্রশাসন ১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি অনুসরণ করে আসছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, জেরুজালেম নগরীর বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভাবী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখা হয় পূর্ব জেরুজালেমকে। কিন্তু ট্রাম্পের ওই ঘোষণার প্রেক্ষিতে পুরো বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। খোদ পশ্চিমা মিত্ররাও ট্রাম্পের এই খেয়ালি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। পরে অবশ্য ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।