ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হাঙরের চেয়ে সেলফি ৫ গুণ ভয়ংকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
হাঙরের চেয়ে সেলফি ৫ গুণ ভয়ংকর প্রতীকী ছবি

ঢাকা: গত এক দশকে মোবাইল ফোন সহজলভ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘সেলফি’। নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করার এ প্রবণতার কারণে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা, প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, হাঙরের আক্রমণের চেয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
 

ভারতের জার্নাল অব ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ারের তথ্যমতে, গত ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাবিশ্বে অন্তত ২৫৯ জন সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন। এ সময়ের মধ্যে হাঙরের হামলায় নিহতের সংখ্যা মাত্র ৫০ জন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি সেলফি তোলেন। তবে, কম বয়সী কিশোররা সেলফি তুলতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নেন। এ কারণে, নিহতদের মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগই তারা। সাধারণত, সেলফি তুলতে গিয়ে পানিতে পড়ে, সড়ক দুর্ঘটনায়, উঁচু ভবন থেকে পড়ে অথবা গুলিতে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ৮০ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন। সেলফির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাণহানিও সেখানেই ঘটে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১৫৯ জন নিজের ছবি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন, যা একই কারণে সারাবিশ্বে প্রাণহানি সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় বা নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারতের বেশ কয়েকটি স্থানে সেলফি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এর মধ্যে শুধু মুম্বাইতেই আছে এ ধরনের ১৬টি এলাকা।  

সেলফির কারণে মৃত্যুর ঘটনায় অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ভারত। তাদের পরে আছে রাশিয়া (১৬ জন নিহত), যুক্তরাষ্ট্র (১৪ জন) ও পাকিস্তান।

রাশিয়ায় ব্রিজ ও উঁচু ভবন থেকে পড়ে, গুলি খেয়ে, এমনকি ল্যান্ডমাইন নিয়ে কাজ করার সময় সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে, ২০১৫ সালে দেশটির পুলিশ ‘ঝুঁকিমুক্ত সেলফি’ তুলতে বিশেষ নির্দেশনা চালু করে।
 
যুক্তরাষ্ট্রে সেলফি তুলতে গিয়ে নিহতদের বেশিরভাগই ‘পারফেক্ট পোজ’ দিতে গিয়ে নিজেকে গুলি করেছেন। গ্রান্ড ক্যানিয়ন থেকে পড়েও মারা গেছেন বেশ কয়েকজন।

সেলফি শুধু প্রাণঘাতীই নয়, যেখানে-সেখানে ছবি তোলার প্রবণতা ঝামেলাও সৃষ্টি করছে হর-হামেশা।

২০১৪ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এদুর্দো ক্যাম্পোসের মরদেহের পাশে হাসিমুখে ছবি তুলে সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলেন এক নারী।

সেলফি উপদ্রবে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন অনেক পর্যটন এলাকার বাসিন্দারাও।

প্যারিসের বিখ্যাত ক্রেমিয়াক্সের বাসিন্দারা সেলফিবাজদের জ্বালাতনে এতটাই বিরক্ত যে, তারা ওই এলাকায় পর্যটক আটকাতে গেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, সেখানকার কিছু লোক ‘ক্লাব ক্রেমিয়াক্স’ নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, যাতে অদ্ভুত ভঙ্গিতে সেলফি তোলা ব্যক্তিদের ছবি নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।  

সেলফি ঠেকাতে বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে ভিয়েনা কর্তৃপক্ষও। সেখানকার বেলভেদির জাদুঘরে গুস্তাভ ক্লিমিতের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য কিস’র পাশে এর একটি নকল ছবি রাখা হয়েছে, যেন সেলফিবাজরা এটার সামনে ছবি তুলতে পারেন, আর প্রকৃত শিল্পপ্রেমীরা আসল ছবিটি নির্বিঘ্নে দেখতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।