ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ কেড়েছে বাবার কর্মস্থল, অনাহারে হাড্ডিসার সন্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
যুদ্ধ কেড়েছে বাবার কর্মস্থল, অনাহারে হাড্ডিসার সন্তান মুয়াতের বয়স দুই বছর হলেও ওজন তার মাত্র সাড়ে পাঁচ কেজি। ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে হাজার হাজার ইয়েমেনির সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কাজের জন্য সৌদি আরব যেতেন আলী মোহাম্মদ। কিন্তু সীমান্তে যুদ্ধের কারণে প্রায় চার বছর ধরে আর তা সম্ভব হচ্ছে না। নিজের প্রত্যন্ত গ্রামে বেকার হয়ে পড়েছেন আলী। অভাবের কারণে খাবারের যোগান নেই বললেই চলে। নিজেদের পাশাপাশি ক্ষুধা ও পুষ্টির অভাবে তার দুই বছরের সন্তান মুয়াতের অবস্থাও হাড্ডিসার। বলতে গেলে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

ইয়েমন যুদ্ধ। একে জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

এ যুদ্ধ দেশটিকে ঠেলে দিয়েছে দুর্ভিক্ষের দিকে। যদিও এখনো দেশটিতে দুর্ভিক্ষ হয়েছে এমন ঘোষণা জাতিসংঘ দেয়নি। তবে সংস্থাটি বলেছে, দুর্ভিক্ষ আসন্ন।

যুদ্ধের কারণে যে কোনো ধরনের সহায়তা, খাবার এবং জ্বালানি ইয়েমেনে পাঠানোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানি কমে গেছে এবং দেশটিতে দেখা দিয়েছে মারত্মক মুদ্রাস্ফীতি। চাকরিজীবীদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা, সরকার কোনো বেতন পরিশোধ করছে না বা করতে পারছে না। আর সংঘাত মানুষকে চাকরি এবং ঘর দুটোই ছাড়তে বাধ্য করেছে।

জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের ৮০ শতাংশ মানুষের এখন মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। বাবার কোলে শিশু মুয়াত।  ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ইয়েমেনের গ্রামজুড়ে শিশুদের অবস্থা আলী মোহাম্মদের ছেলে শিশু মুয়াতের মতো। অপুষ্টির কারণে দুইবছর বয়সী মুয়াতের ওজন মাত্র সাড়ে পাঁচ কেজি। এ গ্রামগুলোতে ভালো খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট।

‘এখানে কোনো কাজ নেই। আমি বাসায় বসে থাকি পুরোটা দিন। যুদ্ধের আগে সবকিছুই ঠিক ছিল আল্লাহর রহমতে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করার আর সুযোগ হয়নি। যতদিন যুদ্ধ শেষ না হবে ততদিন পরিস্থিত বদলাবে না’, বললেন হাজ্জা প্রদেশের বাসিন্দা আলী মোহাম্মদ।

গ্রামের একটি ক্লিনিকে তার শিশুকে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসা সরঞ্জামের স্বল্পতা থাকায় ওখানকার এক স্বাস্থ্যকর্মী ওই শিশুকে অন্য একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ওখানে তাকে ভালোভাবে খাওয়ানো হয়। অন্য ক্লিনিকে যাওয়ার যে পরিবহন ব্যয় তা বহনেও সক্ষম ছিল না শিশুর পরিবার।

মাকিয়াহ আল আসলামি একজন নার্স। তিনি একটি ক্লিনিকে কাজ করেন। পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তার ক্লিনিকে আশপাশের এলাকা থেকে আসা অধিকাংশ শিশুই অপুষ্টিতে ভুগছে। যুদ্ধ ও দারিদ্র্যের কারণে ইতোমধ্যে লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইয়েমেনের হাজ্জা প্রদেশের বাসিন্দা আলীর সন্তান মুয়াত।  ছবি: সংগৃহীত

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালের মার্চে হুথি আন্দোলনের (ইরান সমর্থিত) বিরুদ্ধে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে ১০ হাজারেরও বেশি ইয়েমেনি প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।