ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করা চিকিৎসকই এখন আক্রান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করা চিকিৎসকই এখন আক্রান্ত করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং নিজেই এখন আক্রান্ত। ছবি: সংগৃহীত

গত ৩০ ডিসেম্বরের কথা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে কর্মরত এক চিকিৎসক চীনা ম্যাসেজিং অ্যাপ ‘উইচ্যাটে’ তার মেডিক্যাল স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের গ্রুপে নতুন করোনা ভাইরাস বিষয়ে সতর্ক করেন। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে লি ওয়েনলিয়াং নামে ওই চিকিৎসককে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয়। এখন তিনি নিজেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, উইচ্যাটে সতর্ক করে লি ওয়েনলিয়াং জানান, উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ‘সার্সের মতো’ রোগে আক্রান্ত হয়ে সাত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

তাদের পৃথক স্থানে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

লি বলেন, আমি একটা টেস্ট দেখে বুঝতে পারি এটি এক ধরনের করোনা ভাইরাস। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সতর্ক করতে আমি ওই মেসেজ লিখেছিলাম।

তারপর ওই মেসেজটি স্ক্রিনশট আকারে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেখানে তার নামটিও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল। এতে বিপদে পড়েন ৩৪ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনে উহান পুলিশ।

ওই দিনই উহান মিউনিসিপাল হেলথ কমিশন থেকে এক জরুরি বার্তায় জানানো হয়, সি-ফুড মার্কেট থেকে আগত ওই সাত রোগীর ‘অজ্ঞাত নিউমোনিয়া’ ছিল। একই সঙ্গে সতর্ক করে জানানো হয়, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি চিকিৎসার তথ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে পারবেন না।

পরে ৩১ ডিসেম্বর উহানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জরুরি সভা হয়। সভার পর নতুন করোনা ভাইরাসের  ব্যাপারে সবাইকে জানায় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়। কিন্তু তারপরও লি রেহাই পাননি।

৩ জানুয়ারি ‘অনলাইনে গুজব ছড়ানো ও সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত করার’ অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ তাকে থানায় তলব করে। ‘বেআইনি’ কাজের কথা স্বীকার করে এবং আর কোনো আইনবিরোধী কাজ না করার অঙ্গীকার করে এক ঘণ্টা পর থানা থেকে বের হন লি।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিনগুলোতে যেসব চিকিৎসক এ নিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন, তাদের অনেকেই পুলিশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন। লি তাদেরই একজন।

পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কাজে ফেরেন লি। পরে ১০ জানুয়ারি নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা করার সময় তিনি এতে আক্রান্ত হন। জ্বর ও কাশি নিয়ে ১২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উহানের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। চীনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এ পর্যন্ত ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইন ও হংকংয়ে একজন করে মারা গেছে। প্রথমদিকে এ ভাইরাসের কথা গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল চীন। সেসময় যারাই এ বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেছেন, গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। পরে পরিস্থিতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাসীকে এ ভাইরাসের কথা জানাতে বাধ্য হয় দেশটি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।