ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

টাকাকড়িহীন বিরাট ধনী সুলেমান আল রাজহি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২০
টাকাকড়িহীন বিরাট ধনী সুলেমান আল রাজহি সুলেমান আল রাজহি

সৌদি আরবের আল-কাসিম শহরে অবস্থিত একটি পাম বাগানে আছে দুই লাখের বেশি পাম গাছ। বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা।

বছরে ১০ হাজার টন উৎপাদন সক্ষম বাগানটিতে ৪৫ ধরনের খেজুর ফলে। এখানেই শেষ নয়; এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওয়াক্ফ করা বাগান হিসেবে গিনেস বুকে স্থান করে নিয়েছে।

বাগান থেকে আসা সব আয় খরচ করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদ নির্মাণ, দাতব্য কাজ এবং মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুটি মসজিদে রমজানের সময় ইফতার আয়োজনে।

ব্যক্তি উদ্যোগে করা বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই বাগানের মালিক দেশটির শীর্ষ ধনী সুলেমান আল রাজহি। তবে শীর্ষ ধনী হলেও ২০১০ সালে সব ধন-সম্পত্তি ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়দের মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন তিনি।

সুলেমান আল রাজহির উত্থানটা অবশ্য বেশ লড়াইয়ের এবং উৎসাহব্যঞ্জক। দরিদ্র ঘরে তার জন্ম। তিনি যখন স্কুলে পড়েন তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ এক বিনোদন ভ্রমণের আয়োজন করে এবং খরচ বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক রিয়াল করে দিতে বলে। আল রাজহি বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে তা জানান এবং এক রিয়াল দিতে বলেন। কিন্তু তাদের ওই পরিমাণ অর্থ দেওয়ার সামর্থ্যটুকুও ছিল না। বিনোদন ভ্রমণের তারিখ এগিয়ে আসতে থাকলে তিনি কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কিন্তু ছেলের কান্নাকাটি ও আকুতি-মিনতি সত্ত্বেও তারা অর্থ জোগাড়ে ব্যর্থ হন। এরই মাঝে তার ত্রৈমাসিক পরীক্ষার ফলাফল আসে। এতে তিনি ক্লাসে প্রথম স্থান দখল করেন। ফলাফলে খুশি হয়ে স্কুলের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষক তাকে পুরস্কার হিসেবে এক রিয়াল দেন। তা তিনি চাঁদা হিসেবে দেন।

যাহোক, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনার পর্ব শেষ করে উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। জেদ্দায় মাত্র একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ‘আল রাজহি’ নামে একটি ব্যাংক চালু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে বেশ সফলতা পান তিনি। পুরো সৌদি আরবজুড়ে আল রাজহি ব্যাংকের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।

খ্যাতিলাভ ও বিত্তবৈভব গড়ার পথে নিজের অতীতের কথা কখনো ভোলেননি তিনি। যে ফিলিস্তিনি স্কুলশিক্ষক তাকে ক্লাসে প্রথম হওয়ায় এক রিয়াল দিয়েছিলেন ওই শিক্ষকের সন্ধান করেন। এক সময় তিনি তাকে খুঁজেও পান। স্কুল জীবনের ওই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষককে তিনি নিজের গাড়িতে তুলে নেন ও তার কাছে ঋণী বলে জানান। তখন শিক্ষক সহাস্যে বলেন, তুমি এখন আমাকে সেই এক রিয়াল ফেরত দিতে চাইছ? আল রাজহি তার গাড়িটি এক বাংলোর সামনে পার্ক করেন। সেখানে একটি দামি গাড়িও রাখা ছিল। গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষককে নিয়ে বাংলোর সামনে গিয়ে বলেন, আজ থেকে এই বাংলো ও গাড়ি আপনার। এখন থেকে আপনার সব ব্যয় বহনের দায়িত্ব আমার। একথা শুনে ওই শিক্ষকের চোখে পানি এসে যায়। এখানে বলা দরকার, শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর চরম দরিদ্রতার মধ্যে জীবনযাপন করছিলেন ওই শিক্ষক।

বর্তমানে সুলেমান আল রাজহির ওয়াকফের মূল্যমান ৬০ বিলিয়ন রিয়ালের বেশি (সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি)। তার প্রতিষ্ঠিত আল রাজহি ব্যাংক বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া ‘আল-ওয়াতানিয়া’ নামে তার একটি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে যেটি পোলট্রি খাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।  

মানবহিতৈষী হিসেবেও বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে সুলেমান আল রাজহির। সৌদি আরবে এমন কোনো শহর পাওয়া যাবে না যেখানে আল রাজহি পরিবারের অর্থ সহায়তায় তৈরি মসজিদ নেই। এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আল রাজহির পরিবারের অধীন ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের বেতন পেয়ে যায়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়ও তার ব্যাংক সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ১৭০ মিলিয়ন রিয়াল দান করেছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস সাময়িকী বিশ্বের শীর্ষ ২০ মানবহিতৈষীর একজন হিসেবে তাকে এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছে। সৌদির শীর্ষ ধনী সুলেমান আল রাজহিকে আসলে বলা চলে টাকাকড়িহীন বিরাট ধনী।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।