ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান-তালেবান ঘনিষ্ঠতার নেপথ্য কারণ

আশিস বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১০
পাকিস্তান-তালেবান ঘনিষ্ঠতার নেপথ্য কারণ

ঢাকা: সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দেশ পাকিস্তান। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনারা একযোগে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।

তারপরও অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে।
এ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। আছে গবেষণাপত্রও। সম্প্রতি ওয়েবসাইট উইকিলিকস পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের (আইএসআই) সঙ্গে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ হাজির করে। তবে পাকিস্তান সরকার বরাবরের মতো এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আইএসআই কেন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে সে তত্ত্ব তালাশ করে বিখ্যাত হারপারস ম্যাগাজিন ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে পাকিস্তানি বিশ্লেষক আহমেদ রশিদের লেখা একটি বই ‘ডিসেন্ট ইনটু ক্যায়স’ থেকে কিছু উদাহরণ তুলে ইনসাইড দ্য পাকিস্তান-তালিবান রিলেশনশিপ: ‘সিক্স কোয়েশ্চনস ফর  আহমেদ রশিদ, অথর অব ডিসেন্ট ইনটু ক্যায়স’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। সেখানে রশিদ এ বিষয়ে ৬টি প্রশ্নের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সমস্যাকে যুক্তরাষ্ট্র ততোটা আমল দেয়নি। কারণ, ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আল কায়দার ওপর পুরোপুরি মনোযোগ দেয়। এরই ফাঁকে তালেবান ধীরে ধীরে শক্তি অর্জন করতে থাকে।

রশিদ তার গ্রন্থে বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের শত্রু ছিল উত্তরাঞ্চলীয় জোট। এ জোট পাকিস্তানকে পছন্দ করতো না। তারা চাইতো না পাকিস্তান আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করুক। উত্তরাঞ্চলীয় জোটকে ভারত, রাশিয়া ও ইরান সমর্থন করতো। এ সুযোগটাই লুফে নেয় আইএসআই। তারা ধারণা করে, আফগানিস্তানে ভারত, ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে গেলে পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বার্থ ুণœ হবে।

এদিকে, ভারত আফগানিস্তানে একটি দূতাবাস ও ৪টি কনস্যুলেট খোলে। আইএসআই এটা ভালো চোখে দেখেনি। এরই ফলে আইএসআই নিজেদের স্বার্থরক্ষায় তালেবানকে সমর্থন দিতে থাকে আর তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে দিতে থাকে সক্রিয় সহযোগিতা। পাকিস্তানে তখন পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায়।

২০০৬- ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করে যে, মোশাররফের আর দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য মোশাররফ সেনাবাহিনীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আল কায়দার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে শুরু করে। মোশাররফ বুঝতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে আর সমর্থন করছে না। বরং তারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র সঙ্গে বেশি মাখামাখি শুরু বকরে দিয়েছে। ফলে, মোশাররফ ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে আইএসআইয়ের মাধ্যমে ইসলামী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্রসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে থাকে।

এদিকে, পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্য পাকিস্তানকে কোটি কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দিতে থাকে। অপরদিকে, আইএসআই গোপনে এ অর্থ তালেবানদের পেছনে ঢালতে থাকে। শুধু তাই নয়, তারা তালেবান জঙ্গিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দিতে থাকে। এ সাহায্য ২০১০ সালেও অব্যাহত থাকে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে  লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সেস-এর ক্রাইসিস স্টেটস রিসার্চ সেন্টার এ বছরে জুন মাসে ‘দ্য সান ইন দ্য স্কাই: দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন পাকিস্তান’স আইএসআই অ্যান্ড আফগান ইনসার্জেন্টস’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল’স কার সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস পলিসি-র ফেলো ম্যাথু ওয়াল্ডম্যান গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তিনি তার এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা আইএসআই আফগান তালেবানকে পরিচালনা, অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
 
গবেষণাকাজটি করতে গিয়ে ওয়াল্ডম্যান মাঠ পর্যায়ের জঙ্গি কমান্ডার, সাবেক তালেবান কর্মকর্তা, আফগান নেতৃত্ব, উপজাতীয় নেতৃত্ব ও পশ্চিমা কুটনীতিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন কমান্ডার ওয়াল্ডম্যানকে বলেন, ‘জঙ্গিরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তারা জঙ্গিদের অস্ত্র ও আক্রমণ পরিচালনা বিষয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশ দেয়। ’ হাক্কানি গ্রুপ একটি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী। মোল্লা মোহাম্মদ ওমর এ গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দেন।

ওয়াল্ডম্যান তালেবান জঙ্গিদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি একটি কারাগারে আটক কয়েক তালেবান সদস্যের সাথে দেখা করেন এবং তারা তাকে সমর্থন দিলে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।

পাকিস্তান এখনো কেন তালেবানকে সাহায্য-সহযোগিতা করে, এ বিষয়ে বলতে গিয়ে গোল্ডম্যান জানান, ভারতের সাথে চলমান উত্তেজনা ও ঠাণ্ডাযুদ্ধ ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান যারপরনেই উদ্বিগ্ন। এ কারণেই পাকিস্তান তালেবানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
Ñ বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ১০০২ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬,২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।