ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

লন্ডনে এক কাঁঠাল ১৯ হাজার টাকা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
লন্ডনে এক কাঁঠাল ১৯ হাজার টাকা! লন্ডনের বারা মার্কেটে ১৬০ পাউন্ডে বা ২১৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে একটি কাঁঠাল।

লন্ডনের সবচেয়ে পুরোনো একটি বাজারে ২১৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছিল একটি কাঁঠাল, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৯ হাজার টাকা। সেই কাঁঠালের ছবি তুলেছিলেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদক রিকার্ডো সেনরা।

ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ভাইরাল হয়, শেয়ার হয় এক লাখের বেশি।

রিকার্ডোর নিজের দেশ ব্রাজিলে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে ছবিটি। সত্যি বলতে একটা কাঁঠালের যে এত দাম হতে পারে, তা দেখে বিস্মিত অনেকে। তবে কেউ কেউ রসিকতা করে বলছেন, এবার লন্ডনে গিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যাবেন তারা।

ব্রাজিলের অনেক স্থানে মাত্র এক ডলার দশ সেন্টে কাঁঠাল কিনতে পাওয়া যায়। শুধু ব্রাজিল নয়, বিশ্বের অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে কাঁঠাল বেশ সস্তায় কেনা যায়। অনেক দেশে তো খাওয়া যায় একেবারে বিনামূল্যে, গাছ থেকে পেড়ে। তবে বেশিরভাগ কাঁঠাল আসলে রাস্তাতেই পচে নষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে লন্ডনে একটি কাঁঠালের এত বেশি দাম হাঁকানোর কারণ কী? এই ফল ভোক্তাদের কাছে অভিনব বলে? আর আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ কাঁঠালের দাম বেড়ে গেল কেন?

একটি ফল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সাব্রিনা সারটোরি বলেন, ব্রাজিলে কাঁঠালের দামের হেরফের আছে। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে এটি আপনি বিনামূল্যে গাছ থেকে পেড়ে নিতে পারেন। কিন্তু অনেক জায়গায় এই কাঁঠালের অনেক দাম। এছাড়া যুক্তরাজ্যের মতো শীতপ্রধান দেশে কাঁঠাল ফলানো যায় না।

তবে লন্ডনে একটি কাঁঠালের দাম কেন এত বেশি, তার আরও অনেক কারণ আছে। কাঁঠালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেশ জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা এর বেশ কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেন। যেমন, কাঁঠাল বেশ দ্রুত পচে যায়। এটি কেবল একটি মৌসুমে হয়। আর ফল হিসেবে কাঁঠালের আকৃতি বেশ বড়।

একটি কাঁঠাল ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটি মূলত পাওয়া যায় এশিয়ার দেশগুলোতে। তবে এই ফল খুবই পচনশীল এবং সুপার মার্কেটে এর ‘শেলফ-লাইফ’ একেবারে সংক্ষিপ্ত। যেসব দেশে কাঁঠাল হয়, সেসব দেশেও যে এটি খুব সমাদৃত, তা নয়। কিন্তু সম্প্রতি উন্নত দেশগুলোতে কাঁঠালের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নিরামিষাশীরা, যারা এখন মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁঠাল বেশ পছন্দ করেন। ব্রিটেনে এখন নিরামিষাশী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ বলে ধারণা করা হয়।

এছাড়া কাঁঠাল যখন রান্না করা হয়, তখন এটি খেতে অনেকটা অনেকটা গরু বা শুকরের মাংসের মতো লাগে। ফলে টফু বা কর্নের মতো এটি এখন মাংসের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর কাঁঠাল যখন খুব বেশি পেকে যায় তখন এটি মিষ্টি খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। কাজেই ভোক্তাদের জন্য সস্তায় কাঁঠাল পাওয়ার আরেকটা উপায় হচ্ছে টিনজাত কাঁঠাল কেনা।

ব্রিটেনের সুপারমার্কেটে এক টিন কাঁঠালের দাম প্রায় চার ডলার। কিন্তু অনেকে বলেন, টিনজাত কাঁঠাল খেয়ে আসল কাঁঠালের স্বাদ পাওয়া যায় না। কাঁঠাল যেহেতু আকারে অনেক বড়, তাই এটি পরিবহন করা বেশ কঠিন। অসম আকৃতি এবং ওজনের কারণে এটি প্যাকেটজাত করা অসুবিধার। অন্যান্য ফল যেমন একই সাইজের বক্সে ভরা যায়, কাঁঠালের বেলায় তা সম্ভব নয়। আর বাইরে থেকে দেখে আসলে বোঝা যায় না, কোন কাঁঠাল ভালো আছে, নাকি খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে গেছে।

কাঁঠাল সবচেয়ে বেশি হয় দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এটি বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার জাতীয় ফল। এসব দেশ থেকেই মূলত কাঁঠাল রফতানি হয়, কিন্তু এখানে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা ভালো নয়। গাছ থেকে পাড়ার পর কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে তার ভালো ব্যবস্থা নেই। যার ফলে ৭০ শতাংশ কাঁঠালই আসলে নষ্ট হয়। ভারতে আবার কাঁঠাল বেশ অপাংক্তেয় একটি ফল। গ্রামীণ এলাকায় এটি গরীব লোকের খাদ্য হিসেবে দেখা হয়।

নেদারল্যান্ডসে অভিনব সব বিদেশি ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টোরেজ ট্রপিক্যাল বিভি’র মালিক ফ্যাব্রিসিও টোরেজ বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে বিমানে পণ্য পরিবহনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এশিয়া বা দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ থেকে ফল আসে যাত্রীবাহী বিমানে। বিমান সংস্থাগুলো এখন এমন পণ্য পরিবহনে উৎসাহী যাতে অনেক বেশি ভাড়া পাওয়া যাবে। কাজেই বেশি পরিমাণে আমদানিতে এখনো লাভ নেই। এ কারণেই কাঁঠালের খুচরা বিক্রয়মূল্য বেশি।

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কাঁঠালের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রি এআরসি’র হিসেবে, ২০২৬ সাল নাগাদ কাঁঠালের আন্তর্জাতিক বাজার ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্রতি বছরে এই বাজার বাড়বে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। ২০২০ সালে বিশ্বে কাঁঠালের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে, ৩৭ শতাংশ। এরপরে ছিল যথাক্রমে ইউরোপ (২৩%), উত্তর আমেরিকা (২০%), বাকি বিশ্ব (১২%) এবং দক্ষিণ আমেরিকা (৮%)।

সূত্র: বিবিসিবাংলা

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।