ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাজ্য 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাজ্য  ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা।

 

তবে রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন।  

ইউক্রেনের আকাশে ‘নো-ফ্লাই জোন’ তৈরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যেহেতু ন্যাটোর সদস্য দেশ নয়, তাই এটা করা সম্ভব নয়।

বেন ওয়ালেস বলেন, একটি ‘নো-ফ্লাই জোন’ করতে হলে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানকে সরাসরি রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের বিপক্ষে পাঠাতে হবে। ফলে রাশিয়ার বিপক্ষে ন্যাটোকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সেটা (নো-ফ্লাই জোন) করা হলে এটাই ঘটবে।  

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইউরোপে একটি যুদ্ধ শুরু করে দিতে চাই না। কিন্তু ইউক্রেনকে লড়াই করার জন্য যত রকমের সহায়তা দেওয়া দরকার, তা আমি দিয়ে যাব’।  

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়ার বিষয়ে ২০০৮ সাল থেকে ব্রিটেন সমর্থন করে আসছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো চায়নি ইউক্রেন ন্যাটো সামরিক জোটে আসুক।  

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুতিন একজন বিচারশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি নন। বাল্টিক দেশগুলো যে একেকটি আলাদা দেশ, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। তার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে’।  

রুশ সামরিক অভিযানের প্রথম দিনে দেশটিতে অন্তত ১৩৭ জন মারা গেছেন বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেন একাই যুদ্ধ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই যুদ্ধে পশ্চিমা বন্ধুদের পাশে পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।  
  
রাশিয়ার নৃশংস হামলা বন্ধ করতে এবং ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছে তাই আবার আবেদন জানিয়েছেন জেলেনস্কি।  

তবে প্রথম থেকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার হলেও যুদ্ধের মাঠে দেশটিকে সহায়তায় এগিয়ে আসেনি পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়েই থেমে গেছে। এ জন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে রাশিয়ার ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

যুক্তরাজ্য পাঁচটি রাশিয়ান ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করেছে এবং সেসব ব্যাংককে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়েছে। একই ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আর জাপানও।  

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় হাইটেক যন্ত্রপাতি রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোনো দেশই এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সরাসরি সমর্থনে সেখানে সেনা পাঠাবে না বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে সাত হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জার্মানিতে ‘ন্যাটো জোটের মিত্রদের আশ্বস্ত’ করার লক্ষ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো মিশনে ৪৬০ জন সেনা সদস্য পাঠাবে তারা। তবে কানাডা ইউক্রেনে সেনা সহায়তা পাঠানোর চিন্তা করছে কি না, সে বিষয়ে কিছু তারা জানায়নি।

জাতিসংঘ বলছে, এরই মধ্যে অন্তত এক লাখ মানুষ যুদ্ধের সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘর ছেড়েছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও মলদোভায় শরণার্থী পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।  

রাশিয়ার পাল্টা ‘অ্যাকশন’ 
রাশিয়ার আকাশসীমায় যুক্তরাজ্যের সব ধরনের বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লোটের চলাচল নিষিদ্ধ করার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল।

রাশিয়ান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত বা নিবন্ধিত সংস্থার মালিকানাধীন, ইজারা দেওয়া বা পরিচালিত বিমানের ফ্লাইট রাশিয়ার আকাশসীমা আর ব্যবহার করতে পারবে না।  

যুক্তরাজ্যের অবন্ধুসুলভ সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।  

দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ চলছে
যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সৈন্যরা। তবে ইউক্রেন সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।  

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি টুইট বার্তায় জানায়, ‘শত্রুরা’ এখন ওবোলোনে পৌঁছে গেছে। এটি কিয়েভ শহরের কেন্দ্রস্থল, কিয়েভের পার্লামেন্ট থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে।

স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা যেন মলোতভ ককটেল তৈরি করে পাল্টা লড়াই শুরু করেন। সেই সঙ্গে অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাসায় থাকলেও বের হতে বারণ করা হয়েছে।  

শুক্রবার সকাল থেকে কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। অপরদিকে ইউক্রেনের বড় বড় অনেক শহর এবং সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।