ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সুইফট কী, কে নিয়ন্ত্রণ করে? রাশিয়ার জন্য কি বড় ধাক্কা? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
সুইফট কী, কে নিয়ন্ত্রণ করে? রাশিয়ার জন্য কি বড় ধাক্কা? 

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পশ্চিম দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিষেধাজ্ঞা হলো ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে ঐকমত্য।

 

আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে বার্তা আদানপ্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিধিদ্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো একমত হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে রাশিয়া যে অর্থ আয় করে, সেই অর্থ আদায়ে দেশটি সুইফটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।  

জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, রাশিয়ার এসব ব্যাংকে বৈদেশিক অর্থ লেনদেন বন্ধ করাই তাদের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে—এমন পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

সুইফট কী, কীভাবে কাজ করে? 
১৯৭৩ সালে তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামে। বিশ্বের ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের বিষয়ে বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এই সুইফট।

সুইফট এর পূর্ণরূপ সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকম্যুনিকেশন। বিশ্বব্যাপী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক লেনদেন করতে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য আদান প্রদানের জন্য সুইফটকে একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি তাৎক্ষণিক মেসেজিং ব্যবস্থা, যা কোনো লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহককে তৎক্ষণিক জানিয়ে দেয়। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের মধ্যকার বার্তা আদান প্রদানের কাজে সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

সুইফট নেটওয়ার্ক দিয়ে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা যায় না, এটা শুধু অনলাইনে পেমেন্ট অর্ডার প্রেরণ করে। একটি ব্যাংক তাদের সুইফট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্য একটি ব্যাংককে অর্থ পরিশোধের অনুরোধ পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই আদেশ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করে।

বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখলেও কোনো দেশের ওপর অবরোধ আরোপের আইনি ক্ষমতা নেই এই প্রতিষ্ঠানটির।  

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, রাশিয়া যাতে তার যুদ্ধকালীন অর্থ ভাণ্ডার ব্যবহার করতে না পারে, পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সে বিষয়ে কাজ করছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে কোনো সম্পদ বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সুইফট নিয়ন্ত্রণ করে কারা?
সুইফট তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ব্যাংকসমূহের উদ্যোগে, যারা চাননি একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান কোনো একক সিস্টেম তৈরি করে কাজ করবে এবং নিজেদের একচেটিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিচালনা করবে।

যৌথভাবে এই নেটওয়ার্কের মালিক বিশ্বের দুই হাজার ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম সুইফটের কাজকর্ম দেখাশোনা করে থাকে।

এই নেটওয়ার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পরিচালিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিশ্চিত হয় সুইফটের মাধ্যমে। কোনো বিরোধের ক্ষেত্রে পক্ষ অবলম্বন করার কথা নয় প্রতিষ্ঠানটির।  

তবে ২০১২ সালে পরমাণু কর্মসূচির কারণে ইরানের ওপর সুইফটের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এতে করে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় অর্ধেক কমে গিয়েছিল এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ হারিয়েছিল।  

সুইফট বলছে, কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনো প্রভাব থাকে না। বরং নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে কোনো দেশের সরকারের ওপর।

নিষেধাজ্ঞার ফল কী হতে পারে?
এই ঠিক মুহূর্তে রাশিয়ার কোন কোন ব্যাংককে সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, সেটি পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। সামনের দিনগুলোতে হয়তো সে তথ্য জানা যাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যরা বলছে, এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে, ‘এই ব্যাংকগুলো (যাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে) আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে, যাতে বিশ্বব্যাপী তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার সামর্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে’।

এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে, রুশ কোম্পানিগুলো যাতে সুইফটের মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের মতো নির্ঝঞ্ঝাটে এবং তাৎক্ষণিক লেনদেন পরিচালনা করতে না পারে। এর ফলে এখন রাশিয়ার জ্বালানি এবং কৃষিপণ্য বিক্রির অর্থ আদায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ব্যাংকগুলোকে এখন সরাসরি একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এতে সময়ক্ষেপণ হবে এবং বাড়তি খরচ গুনতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত রুশ সরকারের রাজস্ব আয় কমিয়ে দেবে।

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নিলে ওই সময় সুইফট থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। রাশিয়া তখন বলেছিল, সেটা করা হলে তা হবে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য। সেসময় পশ্চিমা দেশগুলো আর সামনে এগোয়নি।

নতুন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় রুশ সরকার ন্যাশনাল পেমেন্ট কার্ড (মির নামে পরিচিত) তৈরি করে। যদিও অল্প কয়েকটি রাষ্ট্র বর্তমানে সেটি ব্যবহার করছে।

প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে একাই লড়ছে ইউক্রেন। পশ্চিমা কোনো দেশ যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।