ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিশর থেকে নির্বাসিত মুসলিম নেতা ইউসুফ মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
মিশর থেকে নির্বাসিত মুসলিম নেতা ইউসুফ মারা গেছেন

সুন্নি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় স্কলার শেখ ইউসুফ আল-কারাদাভি মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

তাকে মিশর থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ খবর দেওয়া হয়।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, শেখ ইউসুফ আল-কারাদাভি একজন মিশরীয়। তবে তিনি কাতারে বসবাস করছিলেন। আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলার্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবেও তিনি ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।

আল জাজিরায় সম্প্রচারিত ধর্মীয় বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিতেন শেখ ইউসুফ। ‘শরিয়াহ ও জীবন’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালকও ছিলেন তিনি। দৈনন্দিন জীবনের জাগতিক দিক থেকে বিশ্ব রাজনীতির ব্যাপারে আলোচনা করতেন। মুসলিম বিশ্বে ধর্মতাত্ত্বিক বিধিবিধান নিয় পরামর্শও দিনে এ স্কলার্স।

২০১৩ সালে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতকারী অভ্যুত্থানের জন্য আল-কারাদাদাভি সমালোচিত হয়েছিলেন। কেননা মুরসি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন। সংগঠনের হয়ে সক্রিয় আন্দোলনের সমর্থনও করতেন তিনি।

মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির বিরোধিতার কারণে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আল-কারাদাউই মিশরে ফিরতে পারেননি। ২০১১ সালে মিশরের বিপ্লব ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে উৎখাতের আগে থেকেই আল-কারাদাদাভি নির্বাসনে ছিলেন।

মিশরে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ব্রাদারহুড তার সবগুলো শাখা ২০১১ সালের বিদ্রোহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও ব্যাপক বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিল। যে কারণে আল-কারাদাদাভিকে বিচারের আওতায় এনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় তিনি মিশরে ছিলেন না।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা অবস্থায় ১৯২৬ সালে মিশরে জন্ম নেন আল-কারাদাদাভি। যুবক বয়সেও তিনি ঔপনিবেশিক বিরোধী কর্মকাণ্ডে একাট্টা ছিলেন। ব্রিটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তার সক্রিয়তা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে ১৯৫০ সালে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন এ ধর্মীয় নেতা।

১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে তিনি কাতারে চলে যান। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া অনুষদের ডিন নিযুক্ত হন আল-কারাদাদাভি। পরে দেশটির নাগরিকত্ব পান।

১৯৭৩ সালে তিনি ফিকহ আল-জাকাত (জাকাতের আইনশাস্ত্র) নামে একটি বই লেখেন। এতে তিনি অমুসলিম সমাজে মুসলমানদের আরও ভালোভাবে সংহত করতে ইসলামী আইনের ঐতিহাসিক নিয়মগুলোকে পুনর্ব্যাখ্যা করেন। যা তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।

ইসরায়ের বিদ্বেষী হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন শেখ ইউসুফ আল-কারাদাভি। দ্বিতীয় ইন্তিফাদাতে ইহুদি দেশটির বিরুদ্ধে আত্মঘাতী বোমা হামলাকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতন হয়। এ সময় ইরাকজুড়ে যে বিদ্রোহ শুরু হয় আল-কারাদাভি সেটির সমর্থনে করেছিলেন। এ দুই ঘটনায় তার অবস্থান তাকে পশ্চিমে দীর্ঘস্থায়ী কুখ্যাতি এনে দেয়।

২০০৯ সালে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেট তার বিরুদ্ধে জেরুজালেমে জঙ্গি অবকাঠামো স্থাপনে হামাসকে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়াও অভিযোগ করেছিল। যদিও গাজা শাসনকারী হামাস তা সব সময় অস্বীকার করেছে।

শেখ ইউসুফ আল-কারাদাভির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মুসলিম বিশ্ব।

সূত্র: আল জাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।