ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

লাকসাম পৌরসভাকে নতুন করে সাজাবেন আবুল খায়ের

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
লাকসাম পৌরসভাকে নতুন করে সাজাবেন আবুল খায়ের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুমিল্লা: ‘পরিবর্তনের অঙ্গীকার, উন্নয়নের খুলবে দ্বার’ স্লোগানে লাকসাম পৌরবাসীর সেবা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। এখন সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে লাকসাম পৌর এলাকাকে নতুন করে সাজাব।



বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন লাকসাম পৌর মেয়র আবুল খায়ের।

লাকসাম পৌরসভায় নৌকা প্রতীক নিয়ে আবুল খায়ের প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী শাহনাজ আক্তারকে পরাজিত করে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই জেলার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা লাকসামকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

মেয়র মো. আবুল খায়ের লাকসাম পৌর এলাকার হাউজিং এস্টেট এলাকার মৃত নজির আহমেদ ও আছিয়া খাতুনের ছেলে। তিনি ১৯৭৪ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। গাজীমুড়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে স্টার মার্ক পেয়ে দাখিল পাস করেন। পরে ১৯৯০ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স পাস করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ব্যবসা ও অধ্যাপনা শুরু করেন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নাঙ্গলকোটের ভোলাইন বাজার কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।

মেয়র আবুল খায়ের দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ২০০৩-১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক,  ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচনের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমি দলীয় মনোনয়ন পাই। পরে দলের স্বার্থে আমি ছাড় দেই। অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং নির্বাচিত হন। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, দলের স্বার্থে উপজেলা নির্বাচনে অন্যকে সুযোগ দিয়ে নিজে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন থেকে পৌরসভার নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেই। পৌরসভার উন্নয়ন ও নাগরিকদের সেবার স্বার্থে পৌরসভার নির্বাচনের পরিকল্পনা করি।

তিনি বলেন, আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। দলীয় নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল আমাকে সমর্থন দিয়ে আমার নাম প্রস্তাবনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠান। দলীয় নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের সঙ্গে আমি সব সময়ই সু-সর্ম্পক রেখেছি। তাই আমি পৌরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ৭,১৯১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছি।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মেয়র আবুল খায়ের বলেন, আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। কারণ আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিশাল ব্যাপার। এই প্রতীকে ৭০’এর নির্বাচনে আমরা বিশাল জয় পেয়েছিলাম। আর সেই প্রতীকে জয়লাভ করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।

মেয়র আবুল খায়ের বলেন, কুমিল্লা জেলার মধ্যে লাকসাম প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভা। ব্যবসায়িক দিক থেকেও এ পৌরসভা সুপরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভা হিসেবে যে উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা পায়নি পৌরবাসী। প্রায় ১৪ বছর ধরে যারা পৌর ক্ষমতায় ছিল তাদের আন্তরিকতা, দক্ষতা, সততার অভাবে পৌরবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

‘পরির্বতনের অঙ্গীকার, উন্নয়নের খুলবে দ্বার’ স্লোগানে আমি পৌরবাসীর সেবা করার প্রত্যয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। পৌর এলাকায় ড্রেনেজ সমস্যা, রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সমস্যা দূরীকরণ, পৌর কবরস্থান, কেন্দ্রীয় ও পৌর ঈদগাহ, পৌর হর্কাস মার্কেট নির্মাণ, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, বহুতল ভবন বিশিষ্ট পৌর বিপণিবিতান নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। ইতিমধ্যে ইউজিআইপি থ্রি প্রকল্পের আওতায় লাকসাম পৌরসভাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা যেমন এডিপি থেকে উন্নয়নমুখী প্রকল্পগুলোর জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে, প্রথমেই পৌর এলাকার রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করব।

যেসব এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন সেসব এলাকার উন্নয়নে আপনার কৌশল কি জানতে চাইলে মেয়র আবুল খায়ের বলেন, আমার দৃষ্টিতে সব এলাকা ও সব মানুষ সমান। কোথায় কম ভোট, কোথায় বেশি ভোট পেয়েছি, কোথায় আমার লোক কম, কোথায় লোক বেশি এসব বিষয় নিয়ে আমি চিন্তা করি না। উন্নয়ন প্রয়োজনের নিরিখে সব এলাকার প্রতি আমার সমান দৃষ্টি থাকবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র আবুল খায়ের বলেন, সংসদ সদস্যদের চেয়ে স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অবশ্যই বেশি বলে মনে করি। সংসদ সদস্যরা আইন পরিষদের সদস্য। তারা আইন প্রণয়ন করেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা করে থাকেন। সংসদ সদস্যেদের রাজধানীতে সময় দিতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত থাকেন। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতাও বেশি।

তিনি আরও বলেন, পরের নির্বাচনে অংশ নেওয়া জনগণের প্রত্যাশা ও সমর্থনের ওপর নির্ভর করবে। এই প্রথম পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি পৌরবাসীকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা আমার দক্ষতা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে করার চেষ্টা করব। জনগণ ও দল চাইলে পরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি সময় বলে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭  ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।