ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পরনিন্দা নয়, ইসলামের শিক্ষা শুধরে দেওয়া

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
পরনিন্দা নয়, ইসলামের শিক্ষা শুধরে দেওয়া

পরনিন্দা ও অপরের সমালোচনা নিকৃষ্ট অভ্যাস। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনা করাই হলো পরনিন্দা বা সমালোচনা।

শরিয়তের পরিভাষায় এমন অনৈতিক চর্চাকে ‘গিবত’ বলা হয়।

যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যদি সেই দোষ তার মধ্যে থাকে তাহলে গিবত হিসেবে ধর্তব্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে।

অপবাদ গিবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত।

গিবত শুধু মুখে বলার দ্বারা হয় তা নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারাও গিবত হয়। গিবত শ্রবণ করা গিবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দুটিই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় ধরনের মানুষের গিবত করা হারাম।

গিবত শুধু একটি জঘন্যতম গুনাহ নয়। বরং এটি মানুষের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে দেয়। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।  

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ’ (বুখারি, হাদিস নং ২২৮৭)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস। ’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত  ০১)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে বস্তুত, তোমরা তা ঘৃণাই কর। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত  ১২)।

দুঃখের কথা হলো, আমাদের সমাজের সিংহভাগ মানুষ এ জঘন্য কাজে জড়িত। এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য, যে গিবতের সাথে জড়িত নয়। ঘরবাড়ি, অফিস-কারখানা, রাস্তাঘাট সবখানে গিবত বা পরনিন্দার চর্চা হচ্ছে জোরেশোরে।

আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের লোক থেকে দূরে থাকতে আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তুমি আনুগত্য করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছনা, পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখুরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ। ’ (সুরা ক্বালাম  ১০-১৩) 
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন দুনিয়ায়ই তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়- ওই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে সেখান থেকে জুলুমের সমপরিমাণ তার থেকে কর্তন করে নেওয়া হবে। আর তার কোনো নেক আমল না থাকলে মজলুমের গুনাহের কিছু অংশ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বোখারি, হাদিস নং ২২৮৭)

কখনো অহংকার, ক্রোধ ও সম্মানের মোহ থেকে গিবত সৃষ্টি হয়। আবার কখনো হিংসা থেকে গিবতের সূত্র তৈরি হয়। যেভাবেই হোক গিবত চরম নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত অপরাধ। ইসলামের শিক্ষা হলো, কারো কোনো দোষ-ত্রুটি নজরে পড়লে আপোষে জানিয়ে দেওয়া। শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা।

গিবত থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক। কারো দোষ বর্ণনা না করে, শুধরে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
এসআইএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।