ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

চুলে মেহেদি ব্যবহার প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

মুফতি মাসুম আহমাদ, অতিথি লেখক,  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
চুলে মেহেদি ব্যবহার প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

আমাদের সমাজের অনেক বয়স্ক আলেম-উলামা ও ধর্মভীরু নামাজি লোকদের মাঝে দুই ধরনের চিত্র দেখা যায়। বয়সের কারণে অনেকের চুল-দাড়ি ধবধবে সাদা, তারা খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করেন না।

আবার অনেককে দেখা যায় তারা খেজাব ব্যবহার করেন। মহিলাদের মাঝেও এ প্রবণতা দৃশ্যমান।

অনেক সময় আবার এটাও দেখা যায় যে, অপরিণত বয়সে অনেক যুবকের মাথার চুল পেকে গেছে। তারা চুল কালো করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন।

এ বিষয়ে মূল আলোচনার শুরুতে একটি মূলনীতি বলে রাখা ভালো। সেটা হলো- হাদিসে নবি করিম (সা.) পাকা চুলে খেজাব ব্যবহারের বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন, তবে তা আবশ্যক ঘোষণা করেননি।

এবার আসা যাক মূল বিষয়ে। এক হাদিসে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু বকর সিদ্দীকের (রা.) পিতা আবু কুহাফার (রা.) চুল এবং দাড়ি পাকা দেখে বললেন, এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো। তবে কালো থেকে বিরত থাক। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ৫৪৬৬

আরেক হাদিসে আছে, হরজত রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, শেষ জামানায় কিছু লোক কবুতরের ঝুঁটির মতো কালো খেজাব ব্যবহার করবে তারা কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪২০৯

অবশ্য কোনো যুবকের অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে যদি চুল-দাড়ি পাকার বয়সের আগেই সাদা হয়ে যায় তবে সে কালো খেজাব ব্যবহার করতে পারবে। আহমাদ আলি সাহারানপুরি বলেন, হাদিসে কালো খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ অন্যদের সামনে বয়স গোপন করা এবং অন্যকে ধোঁকা দেওয়া। -হাশিয়া সহিহ বোখারি ১৫৩০

যুবকের ক্ষেত্রে ধোঁকার এই দিকটি অনুপস্থিত। তাই কোনো কোনো ইসলামি স্কলার যুবকদের জন্য কালো খেজাব জায়েজ হওয়ার মত দিয়েছেন। -ফায়জুল কাদির ১৩৩৬

তাবেয়ি ইবনে শিহাব যুহরি (রহ.) বলেন, আমাদের চেহারা যখন সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেজাব ব্যবহার করতাম। আর যখন আমাদের চেহারা মলিন হয়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল তখন আমরা কালো খেজাব ছেড়ে দিয়েছি। -ফাতহুল বারি ১০৩৬৭

অনেকের অভিমত হলো, হাদিসে যেহেতু কালো খেজাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের জন্যও একেবারে কালো খেজাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেজাব ব্যবহার করাই উচিত হবে। -তুহফাতুল আহওয়াযি ৫১৫৪; ফায়জুল কাদির ১৩৩৬

আর বার্ধক্যের কারণে চুল পেকে গেলে কালো খেজাব ছাড়া অন্য খেজাব ব্যবহার করা মোস্তাহাব। যেমনটি বলা হয়েছে লেখার শুরুতে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু কুহাফাকে (রা.) কালো খেজাব ছাড়া অন্য খেজাব ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অন্য আরেক হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) হলুদ রং ব্যবহার করতে দেখেছি, তাই আমিও হলুদ রং ব্যবহার করতে পছন্দ করি।

ভিন্ন ধর্মের লোকেরা বৃদ্ধ অবস্থায় চুল-দাড়িকে সাদা রাখায় অভ্যস্ত। ইসলামি শরিয়ত মুসলমানকে সাদা চুলে খেজাব ব্যবহার করে এর রং পরিবর্তনের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যাতে অন্যান্য বিষয়ের মতো চুলের অবস্থার ক্ষেত্রেও বিজাতীয় অনুকরণ না থাকে।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা সাদা চুলকে খেজাব দ্বারা বিবর্ণ কর। ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। -সুনানে নাসায়ি ৫০৭৩

চুলে কালো খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করা যাবে না। বার্ধক্য লুকানোর জন্য কালো খেজাব ব্যবহার করা মাকরূহে তাহরিমি। হ্যাঁ, কোনো খেজাব যদি সম্পূর্ণ কালো না হয়, বরং তা মিশ্র রঙের হয় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ আছে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘কাতাম’ (লাল-কালো মিশ্রিত রং বিশেষ) জাতীয় খেজাব ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। কেমিক্যালযুক্ত যে মেহেদির রং সম্পূর্ণ কালো সেটা নামে মেহেদি হলেও ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কালো কলপ ব্যবহার করবে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার চেহারা কালো করে দিবেন। -তুহফাতুল আহওয়াযি ৫৩৫৫

অন্য আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) কালো খেজাব ব্যবহারকারী সম্পর্কে বলেছেন, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। -সুনানে আবু দাউদ ৪২১২

ক্ষেত্রবিশেষ আলেমদের পরামর্শক্রমে দাম্পত্যকলহ রুখতে (শুধু চুলের রংকে কেন্দ্র করে) সংসার রক্ষার প্রয়োজনে কিংবা জীবিকার প্রয়োজনে (চাকরি স্থলের ড্রেসকোড অনুসরণ) কালো খেজাব ব্যবহার করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই সাধারণভাবে নয়। তবে হ্যাঁ, সৈনিকরা চাকুরিরত অবস্থায় কালো খেজাব ব্যবহার করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময় ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।