ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বেচা-কেনার দালালি প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
বেচা-কেনার দালালি প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?

যে ব্যক্তি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অপরের মাল বিক্রি করে দেয় অথবা অপরকে মাল ক্রয় করে দেয়- তাকে আমাদের সমাজে দালাল বলে অভিহিত করা হয়। যদিও আমাদের সমাজে দালালকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় তবুও দালালরা আধুনিককালের বিস্তৃত বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের অপরিহার্য অংশ।



শুধু এ কালেই নয়, প্রাচীনকাল থেকেই হাটে-বাজারে ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। সময়ের স্বল্পতা, অনুপস্থিতি, মাল বা মূল্য সম্পর্কে ধারণার অপরিপক্কতা, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি কারণে মালের মালিক বা কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি অপরকে বেচা-কেনার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন।

ওই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা দালাল তার মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করে অপরের উপকার করে থাকে। আবহমানকালের মানুষের স্বাভাবিক এ প্রয়োজনকে স্বভাব ধর্ম ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে।

কিন্তু কালের আবর্তে সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগে অনান্য পেশাজীবিদের মতো দালালদের মধ্যেও অনুপ্রবেশ ঘটে প্রতারণা, মিথ্যা ইত্যাদি অনৈতিক চরিত্রের। ইসলাম সব ধরনের অনৈতিকতা ও অসততাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট এমন কিছু দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে, যেগুলো মেনে চললে- দালালদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ইতিবাচক থাকত।

ইসলামের দৃষ্টিতে দালাল হলো- আজিরে মুশতারিক বা সময়মুক্ত শ্রমিক। অতএব, অন্যান্য শ্রমিকের মতোই দালালি হালাল হওয়ার জন্য শর্ত হলো, পারিশ্রমিক পূর্বেই নির্দিষ্ট করে নেওয়া।

পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট হওয়ার দু’টি পদ্ধতি। যথা-

ক. পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। যেমন, খালেদ বকরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো- সে বকরকে জমি কিনে দিবে। বিনিময়ে বকর তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিবে।

খ. দামের অংশ নির্দিষ্ট করা। যেমন, জায়েদ উমরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো- সে উমরের গরু যত টাকায় বিক্রি করে দিবে তা থেকে শতকরা পাঁচ টাকা হারে উমর তাকে পারিশ্রমিক দিবে।

দালালের উপরোক্ত উভয় ধরণের পারিশ্রমিক হালাল। পরিষ্কার ভাষায় বিনিময়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকলে একটি মাল বেচা-কেনা করে দিয়ে উভয় পক্ষ থেকে দালালি গ্রহণ করাও হালাল হবে।

যদি বিনিময় অনির্দিষ্ট রেখে বেচা-কেনায় সহযোগিতার চুক্তি করা হয় তাহলে চুক্তি ও বিনিময় সবই নাজায়েজ হবে। যেমন, করিম সাঈদকে বলল, আপনি আমার এ গাড়ি বিক্রি করে আমাকে দুই লক্ষ টাকা দিবেন। এর বেশি যত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন; তা আপনার থাকবে। যুগ শ্রেষ্ঠ ফকিহ মুফতি রশীদ আহমদ (রহ.) শেষোক্ত এ পদ্ধতিকে নাজায়েজ আখ্যা দিয়েছেন।

অনুরূপভাবে গোপন দালালিও নাজায়েজ। যেমন, হাশেম একটি পুরাতন মেশিন বিক্রি করবে। কিন্তু তার জানা মতে এ মেশিনের খরিদ্দার নেই এবং এটা বেচার কোনো বাজারও নেই। আবার সাজ্জাদ একটি পুরাতন মেশিন কিনতে আগ্রহী। কিন্তু তার কাছে বিক্রেতার কোনো সন্ধান নেই। জসিম এ সুযোগে দালালির মাধ্যমে উপার্জনের ইচ্ছা গোপন করে বন্ধুত্বের বেশ ধরে উভয়ের কাছে যেয়ে বেচা-কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করল।

মেশিন কিনে দেওয়ার কথা বলে, সাজ্জাদের থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নিল। অতঃপর তা থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে হাশেমের কাছ থেকে মেশিন কিনে সাজ্জাদকে হস্তান্তর করল। সাজ্জাদের পাঁচ হাজার টাকা জসিম রেখে দিল। জসিমের সঙ্গে চুক্তিকালে সাজ্জাদ জানতো না যে, জসিম এখান থেকে দালালি খাবে। এমতাবস্থায় জসিমের জন্য উক্ত টাকা হারাম হবে।

সাধারণত গরুর বাজারে আরেক ধরণের কৃত্রিম দালালের সন্ধান মেলে। যারা শুধুমাত্র দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আসল খরিদ্দারের সামনে খরিদ্দার সেজে গরুর দাম করে আসল খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়। অতঃপর বিক্রেতার থেকে উক্ত বর্ধিত অংশের কিছু অংশ গ্রহণ করে।

ইসলামে কোনো ধোঁকাবাজির সুযোগ নেই। কাউকে ধোঁকা দিয়ে উপার্জিত সম্পদ কখনো হালাল নয়।

সর্বোপরি শঠতা পরিহার করে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সেবার মানসিকতা নিয়ে কেউ যদি দালালিতে লিপ্ত হয় ইসলাম তাকে স্বাগত জানায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।