ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

একুশে বইমেলায় ধর্মীয় বই

মুহাম্মাদ রাশিদুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
একুশে বইমেলায় ধর্মীয় বই ছবি : দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বই শুধু জ্ঞান দান করে না, আনন্দও দেয়। বই যেমন করে সঙ্গী হতে পারে অন্য কিছু তেমন করে নয়।

পড়ার টেবিলে, বিছানার পাশে, ভ্রমনের সময় ব্যাগে, যেখানেই হোক- বই তার আনন্দময় ও তৃপ্তিদায়ক সঙ্গ দেয় পাঠককে। ভালো বই এক নীরব বন্ধু।

বইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক কিছুর আবির্ভাব হয়েছে। মানুষের হাতে সময় আগের মতো নেই। তাই অনেকে বলে থাকেন, বই পড়ার অভ্যেস কমে যাচ্ছে। কিন্তু বইমেলায় লাখো মানুষের ভীড় আর বই কেনার ব্যস্ততা দেখলে সেই সংশয় একেবারেই অমূলক মনে হয়। তাই বলা যায়, বই পড়া কোনো দিন বন্ধ হবে না। বইয়ের চাহিদা থাকবেই। আমাদের দেশে সাধারণ বই পড়ার এই চাহিদাটি জিইয়ে রাখার পেছনে অনেকখানি অবদান রয়েছে একুশে বইমেলার।

বইমেলা শুধু কেনা-বেচার বাজার নয়। এটি বইকেন্দ্রিক একটি উৎসব। বইমেলা আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। এর কারণ বইমেলা বাংলাভাষাকে প্রাধান্য দেয়। যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, সেই ইতিহাস সামনে এসে যায়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আমরা পৌঁছে যাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। বইমেলা তখন হয়ে যায় এক ইতিহাসের অধ্যায়।

ইতিহাসেরও ইতিহাস থাকে। আমাদেরও আছে। কিন্তু সেই ইতিহাসকে আমরা ভুলতে বসেছি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসা ইতিহাসের সেই গৌরবময় অধ্যায়গুলো। আর এভাবেই বুঝি বিলীন হয়ে যাবে কালের গর্ভে। বাংলাদেশি হিসেবে নিজেদের ইতিহাস জানার আধিকার যেমন আমাদের আছে, ঠিক তেমনিভাবে একজন  মুসলমান হিসেবে নিজের অতীতকে জানার অধিকার আমরা বোধ করি। কারণ আমরা শুধুই বাংলাদেশি নই, মুসলমান বাংলাদেশি। ইসলামের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার চেতনা; এই তৃপ্তি ও চিন্তা একসঙ্গে মিশে এক প্রবল শক্তি সঞ্চার করে আমাদের মাঝে। এগুলোর  কোনোটিই আমাদের থেকে পৃথক করবার মতো নয়।

প্রতি বছর বইমেলার কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে, বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বইয়ের দোকান। বইমেলায় অসংখ্য মানুষ আসে। প্রত্যেকেই একটি করে হলেও বই কেনেন, অনেকে কেনেন একাধিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধের বইমেলায় থাকে। ধর্মীও বইও থাকে। তবে তা তুলনামূলকভাবে নিতান্তই অপ্রতুল। ধর্মীয় বইয়ের স্টল হয় হাতে গোনা কয়েকটা, তাই বই কম থাকাই স্বাভাবিক। ধর্ম মানুষের জন্য অপরিহার্য বিষয়। ইসলাম ধর্ম মানুষকে দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। একজন প্রকৃত মুসলমানের মধ্যে দেশপ্রেম থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ সে দেশপ্রেমকে শুধু তার নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং ইবাদতও মনে করে। তার মধ্যে দেশপ্রেম কাজ করে। ইসলামের প্রতি অনুরাগ বাড়লে স্বভাবতই স্বদেশপ্রেম বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ।

দেশে এখন ধর্মীয় ভাবধারায় লিখিত বই প্রকাশনীর সংখ্যা অনেক। বইয়ের সংখ্যাও পর্যাপ্ত। এ ধারায় লিখিতি বইয়ের সার্বিক মানও আগের তুলনায় বহু গুণে বেড়েছে। প্রবীণ বিজ্ঞ আলেম ও গবেষকদের পাশাপাশি তরুণ আলেমদের মাঝেও ভালো ভালো লেখক তৈরী হচ্ছে। স্থান করে নিচ্ছে লেখনীর জগতে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেনের ব্যানারে বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে প্রতি বছর একটি ধর্মীয় বইমেলার আয়োজন করে থাকে। সেখানে গেলে ইসলামি বইয়ের সম্ভার মোটামুটি আঁচ করা যায়। সেখানেও ইসলামি ভাবধারার সব প্রকাশনী অংশ নেয় না। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আগ্রহী হয় এবং একুশে বইমেলায় অংশ নেয় তাহলেও কম নয়। একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে এসব প্রকাশনী নতুন বই প্রকাশ করতে পারে, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে পারে। এতে লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। সবধরনের মানুষ একুশে বইমেলায় অশংগ্রহণ করে। হরেক রকমের বই কেনে। কেউ আবার সারা বছর অপেক্ষা করে। সারা বছরের বই কিনে নেয় একুশে বইমেলা থেকে। ইসলামি ভাবধারায় লেখা বইয়ের চাহিদা যে একুশে বইমেলায় নেই তা কিন্তু নয়। ইচ্ছে করলে এই চাহিদা আরো বৃদ্ধি করা যায় বিভিন্ন উপায়ে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসে বইমেলায়। এতে অংশ নিলে প্রকাশনীর পরিচিতিও বাড়ে বহুগুণে। দ্বীনী খেদমতের প্রচার প্রসারের বিস্তৃতি তো থাকছেই।

আশা করি, ইসলামি ঘরানার বই প্রকাশনী মালিকরা বিষয়টি আমলে নিবেন এবং প্রকাশনার জগতে দ্বীনী দাওয়াতের অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখবেন। সাথে সাথে আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের অন্তরে ইসলামি ভাবধারায় লিখিত বই পাঠের সুপ্ত চাহিদা জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।