সমাজে নির্মমতা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই নির্মমতার সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা।
নির্দয়ভাবে একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, দেশে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। ধীরে ধীরে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে নির্মমতা ও সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। দেশে নানাভাবে মানুষ হত্যা ও নিপীড়ন চালানোর মতো ঘটনা এতো বেশি ঘটছে যে, এর মারাত্মক প্রভাব সমাজে পড়ছে।
হত্যা-নির্মমতার সর্বশেষ শিকার হয়েছে দেড় বছরের এক শিশু। দাম্পত্য কলহের জের ধরে মা নিজেই শিশুটিকে হত্যা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকায়। এর আগে কান্না করায় বরিশালের বানারীপাড়ার টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় তিন বছরের এক শিশুকে মাটিতে আঁছাড় দিয়ে হত্যা করেন এক নারী।
এমন নৃশংস ঘটনা আরও ঘটেছে। সিলেটে এক শিশুকে চোর অপবাদ দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হবিগঞ্জের বাহুবলে একসঙ্গে চার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। খুলনায় নির্মমভাবে দেহে বাতাস ঢুকিয়ে আরেক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৫৪ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় একটি করে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
শিশু হত্যার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব, অনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, অনলাইন প্রযুক্তির কুপ্রভাব, অনৈতিক জীবনযাপন, মানবপাচার, বিরোধ বা শত্রুতা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা, লোভ, ক্রমাগত রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে এটা বলা যায়, মানুষের মানবিক গুণাবলী ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে অবুঝ শিশুদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা চলে, এটি সুনির্দিষ্টভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার উদ্বোধক পাঠ্য বিষয় না থাকা, চরম অবক্ষয় এবং যথাযথ ধর্মীয় চর্চা না থাকার কুফল। আপন সন্তান হত্যা থেকে শুরু করে শিশু হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোই তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
শিশু হত্যার মতো নির্মম, হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, সমাজের বিশিষ্টজনরাও মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং দিন দিন যেন বেড়েই চলছে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ পাচ্ছে। আরও গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ধরনের ঘটনা এখন সমাজের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাববার বিষয় রয়েছে।
সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করলে সমাজ যে অচিরেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে তা লিখে বা বলে বোঝাবার কোনো প্রয়োজন নেই। সে কারণে সংশ্লিষ্টদের এখনই ভাবতে হবে। শুধু কথায় নয়, কাজেও রূপায়ণ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সবার আগে শিক্ষা এবং সামাজিক চর্চায় মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। তা নাহলে অর্থনৈতিক উন্নতির কথা যতোই বলা হোক, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের ক্রমাগত অবনতির কারণে তা কোনো কাজেই আসবে না। মানুষের নীতি-নৈতিকতাই যদি লোপ পায়, তবে অর্থ যতোই থাকুক তাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না।
আমরা মনে করি, যেকোনো নির্মমতা ও খুনের ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আশু প্রয়োজন। শিশু হত্যার ঘটনার দ্রুত বিচার হওয়া উচিত, যাতে এমন অপরাধ সংঘটনে কেউ লিপ্ত না হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এমএ/এএসআর