অনেক পরিবারের কথা শোনা যায়, শাশুড়ির সামনে পুত্রবধূ ফোনে বাবার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না, যোগাযোগ হলেও মন খুলে কথা বলতে পারেন না। বাবার বাড়ির কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় সতর্ক থেকে কথা বলতে হয়।
আসলে বউ-শাশুড়ির এমন দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে পরস্পর সন্দেহ ও অনুমান। অথচ কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ -সূরা হুজরাত: ১২
কারো গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করা এবং পেছনে নিন্দা করা কোরআনের বর্ণনা মোতাবেক ভীষণ পাপের কাজ। পরস্পর গিবত করাকে কোরআনে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বউয়ের অনুপস্থিতিতে বউয়ের দোষ এবং শাশুড়ির অনুপস্থিতিতে শাশুড়ির দোষ বলা নিত্যদিনের ঘটনা। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। ’ -সূরা হুমাজা: ১
যারা পেছনে কুৎসা রটায় নিন্দা করে কোরআন তাদের অভিশাপ দেয়।
বিয়ের পর বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক হতে হবে ‘মধুর’। পরস্পরের প্রতি হৃদ্যতা মমতা ভালোবাসা থাকবে। শাশুড়ি পুত্রবধূকে আপন মেয়ে মনে করবে, ঠিক একইভাবে পুত্রবধূ শাশুড়িকে গর্ভধারিণী মায়ের মতো মনে করবে। তাহলে বউ-শাশুড়ি উভয়ের জন্য পারিবারিক জীবন সুন্দর, সুখের, শান্তির ও মঙ্গলময় হবে। বাস্তবচিত্র অনেকাংশে ভিন্ন। আমরা সম্পূর্ণ বিপরীতচিত্র দেখি।
আল্লাহতায়ালা ভালো ব্যবহারকারীকে পছন্দ করেন। এ ছাড়া আদব একটি উত্তম গুণ। আদব যেকোনো মানুষের জন্য একটি বড় সম্পদ। যার আদব নেই তার কিছুই নেই। পুত্রবধূকে শাশুড়ির প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখতে হবে। আজকালের আধুনিক পুত্রবধূরা শাশুড়িকে মানতে চায় না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের সুবিচার, অনুগ্রহ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার নির্দেশ দিচ্ছেন। ’ -সূরা নাহল: ৯০
অনেক পুত্রবধূ বাবার বাড়ির বংশমর্যাদা নিয়ে আত্মঅহঙ্কারে বিভোর থাকেন। কোরআনে এটা নিষেধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অহঙ্কারকারীদের ভালোবাসেন না। ’ -সূরা নাহল: ২৩
বউ-শাশুড়ির পরস্পরের মধ্য একটি মানসিক দ্বন্দ্ব সব সময় কাজ করে। শাশুড়ি (ছেলের মা) মনে করেন আমার পেটের সন্তানকে আমি ভালো চিনি জানি। এই মেয়ে (বউ) আসার পর বাবা-মায়ের নাম পর্যন্ত শুনতে পারছে না। আগের চেয়ে ছেলে আমার পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের মতো খোঁজখবর নেয় না। বিয়ের পর থেকে কোনো কিছু বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করে না ইত্যাদি। এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো থেকে একসময় পরিবার ভাঙনের পর্যায়ে চলে যায়। অনুমান সংশয় সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশিরভাগ ব্যক্তি নিজের আন্দাজ অনুমানের অনুসরণ করে, আর সত্যের পরিবর্তে আন্দাজ অনুমান তো কোনো কাজে আসে না। ’-সূরা ইউনূস: ৩৬
শহরের আধুনিক জীবনের বাড়তি আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাসের ব্যয় মেটাতে গিয়ে কোনো কোনো পরিবারের পুত্রবধূরা চাকরি করেন। যারা চাকরি করেন তারা খুব একটা শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি যত্ন নিতে পারে না। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। অনেক পুত্রবধূ ঝামেলা হবে মনে করে কিংবা নিজের স্বপ্ন সুখের বিষয়টি বিবেচনা করে সুকৌশলে শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনুগ্রহ করা সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমিও লোকদের প্রতি তদ্রুপ অনুগ্রহ করো, যেমন আল্লাহ তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন। ’ -সূরা কাসাস: ৭৭
একটি পরিবার সুন্দর রাখার জন্য বউ-শাশুড়ির উভয়ের ভূমিকা রয়েছে। পরিবারকে সুন্দর রাখার জন্য উভয়কে ত্যাগ করতে হবে। প্রবাদে আছে ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। রমণীর আত্মত্যাগ একটি মহৎ গুণ। এই গুণ যেসব পরিবারের বউ-শাশুড়ির মধ্য বেশি বিদ্যমান থাকবে, সেসব পরিবার জগতে সবচেয়ে বেশি সুখী হবে। আমাদের আচার-আচরণ কী হওয়া উচিত এ সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। ’ -সূরা হুজরাত:
পারিবারিকভাবে সুখে থাকার জন্য কুরআনের এ আয়াতটির মর্ম অনুধাবনই যথেষ্ট। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে বিষয়টি বুঝার ও মানার তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৮ ঘন্টা, মে ০৬, ২০১৬
এমএ/