ঢাকা: রাজধানীর কচুক্ষেতের জহুরা খাতুন। অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছেন স্বামী আব্দুল আজিজ।
এর পরে দরিদ্রবান্ধব ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সিজেডএমের পরিবার ‘অপরাজিতা’র সদস্য হন তিনি। এ পরিবারটি জহুরার মতো ৩০ জনকে নিয়ে গঠিত। সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোকে দলবদ্ধ করে তাদের যৌথ ব্যাংক হিসেবে যাকাত তহবিল হস্তান্তর করা হয়। আয় বর্ধনমূলক কাজে বিনিয়োগের সুবিধার্থে সদস্যদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
এর ফলে জহুরা এখন মাসে ৩ হাজার টাকা আয় করছেন। নানা ধরনের লেডিস আইটেম বানাতে পারেন তিনি।
জহুরা বলেন, ‘আগে থাকার জায়গা আছিল না। এহন মাসে তিন হাজার ট্যাকা কামাই করি। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়’।
শুধু জহুরা নয়, গত ৮ বছরে সিজেডেএমের পরিবারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৪০৪টি। পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজারের বেশি। দেশের মধ্যে হতদরিদ্র গ্রাম চিহ্নিত করে যাকাতের টাকায় হতদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করছে সিজেডএম। দলের টাকা বাড়লে সদস্যদেরও টাকার পরিমাণ বাড়ছে।
নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী চতুর্থ যাকাত ফেয়ারে সিজেডএমের কার্যক্রমের বিষয়ে দর্শনার্থীদের অবগত করছেন কর্মকর্তারা। শুক্রবার (২৭ মে) থেকে শুরু হয়েছে এ ফেয়ার, শেষ হচ্ছে শনিবার (২৮ মে)।
সিজেডএম জানায়, মাত্র তিন বছরে যাকাতভিত্তিক কাযর্ক্রমে হতদরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে পরিবারগুলোর মাসে গড় অায় ছিল মাত্র সাত হাজার টাকা, এখন তা ১৮ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। পরিবারগুলোর শিশুরা এখন শতভাগ স্কুলে যাচ্ছে। শতভাগ পরিবার বিশুদ্ধ পানি পান করে এবং তাদের বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন রয়েছে। পরিবারগুলো মাসে মাসে সঞ্চয়ও করছে।
অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তা, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও উৎপাদনশীল কাজে মূলধন সরবরাহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও নৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুনাগরিক তৈরির কাজে সহায়তা করছে সিজেডএম।
সিজেডএমের অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার(প্রোগ্রাম) আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘৮ বছরে যাকাতের টাকায় ২৬ হাজারের বেশি হতদরিদ্র পরিবার দাঁড়িয়ে গেছে। প্রথমে আমরা গ্রাম নির্বাচন করি। এর পরে যাকাতযোগ্য পরিবার নির্বাচন করে ৩০ জন করে একটি দল করে দিয়ে থাকি। দলকে যাকাতের টাকাসহ সদস্যদের আয়বর্ধক কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সদস্যদের এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়, যা অার ফেরত নেওয়া হয় না’।
যাকাত ফেয়ারে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী রিলিফ বাংলাদেশ। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাকাত সহায়ক নানা সেবার কার্যক্রমও দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর