স্বামী যদি অসহোযিগতা করে, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন না করে- তাহলে শুধু রমণীর গুণে সংসার সুখী হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক আবার তোমরাও স্ত্রীদের পোশাক।
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে সুখময় সংসার গঠনে উভয়ের ভূমিকা ও দায়িত্ব সমান। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘স্বামীর যেমন স্ত্রীর থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি স্ত্রীরও অধিকার আছে স্বামী থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার। ’ -সূরা বাকারা: ২২৮
এ আয়াতে সদাচারণের আদেশ উভয়কে সমানভাবে করা হয়েছে। উপরন্তু সূরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে বিশেষভাবে শুধু স্বামীকে আদেশ করা হয়েছে, ‘তোমার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। ’ এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, সংসারের মিল-মহব্বত, সুখ-শান্তি ধরে রাখার পেছনে স্বামীর আচরণের ভূমিকাটাই মূখ্য।
নিম্নে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো- যেগুলোর অনুশীলনের ফলে একজন মানুষ দায়িত্বশীল ও সফল স্বামীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। বিষয়গুলো হলো-
জীবনসঙ্গীনীর জন্য নিজেকে সাজান
আপনার জীবনসঙ্গীনীর জন্য আপনি নিজে সুন্দর পোশাক পরিধান করুন, সুগন্ধি ব্যবহার করুন। ভেবে দেখুন, আপনি আপনার দাম্পত্য জীবনে সর্বশেষ কবে শুধু আপনার স্ত্রীর জন্য সুন্দর পোশাক পরিধান করেছিলেন!
যেভাবে স্বামী চায় তার স্ত্রী তার জন্য সেজে থাকুক, ঠিক সেভাবেই স্ত্রীও চায় তার স্বামী তার জন্য সেজে থাকুক। মনে রাখবেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ঘরে এসে মেসওয়াক করতেন, সবসময় আতর মেখে থাকতেন।
জীবনসঙ্গীনীর জন্য সুন্দর একটা নাম নির্বাচন করুন
আপনার জীবনসঙ্গীনীকে ডাকার জন্য খুব সুন্দর একটা নাম নির্বাচন করুন। কখনও তাকে কোনো বাজে নামে বা মন্দ শব্দে ডাকবেন না। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের এমন নামে ডাকতেন যে নামে ডাকা তারা পছন্দ করত।
তাই তার জন্য তার মনের মতো একটি সুন্দর নাম নির্ধারণ করুন। যে নামের ডাকে খুশিতে তার মন ভরে যাবে।
স্ত্রীর গুণের মূল্যায়ন করুন
অনেক পরিবারে স্ত্রী সারাদিন খাটুনির পরেও স্বামীর মন পায় না। এমনকি এত কিছু করার পরেও সামান্য দোষ করা মাত্রই স্বামী তা কঠিনভাবে ধরে। স্ত্রীর সঙ্গে এমনটি কখনও করবেন না। এটা চরম ভুল ও জুলুম। স্ত্রীর গুণ ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করুন। শুধুমাত্র তার গুণগুলোর প্রতি আপনার মনোযোগ ও দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন।
স্ত্রীর ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন
আপনার জীবনসঙ্গীনীকে কোনো ভুল করতে দেখলে তা সযত্নে এড়িয়ে চলুন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীকে অপছন্দের কিছু করতে দেখলে চুপ থাকতেন। খুব কম সংখ্যক স্বামী এ গুণের অধিকারী হতে পারে।
তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসুন
সে যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে দেখে মুচকি হাসুন। বেশিরভাগ সাক্ষাতের সময়, বিদায়ের সময় আলিঙ্গন করুন। হাদিসের ভাষ্যমতে মুসলমানকে দেখে মুচকি হাসি দেওয়াও একটি দান। আপনার স্ত্রীওতো একজন মুসলমান।
ভেবে দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি সবসময় আপনাকে হাসি-খুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে! সেই হাদিসের কথা মনে রাখুন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজের জন্য যেতেন তখন স্ত্রীকে চুমু দিয়ে যেতেন।
স্ত্রীর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন
আপনার জন্য, আপনার সংসারের জন্য সে যে কাজগুলো করছে বা করেছে সেগুলোর জন্য খোলা মনে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। ঘনঘন তার কাজের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। মুক্ত মনে তার শ্রম ও মননের স্বীকৃতি দিন। তার কাজের ভুল ধরার চেষ্টা করবেন না, তার সমালোচনা করার চেষ্টা করবেন না।
জীবনসঙ্গীনীকে খুশি করুন
জীবনসঙ্গীনীকে বলুন, সে যেন এমন দশটি কাজের কথা আপনাকে বলে যেগুলো আপনি তার জন্য করলে তার ভালো লাগবে- সে খুশি হবে। তার থেকে জেনে নিয়ে তাকে খুশি করার জন্য আপনি সেগুলো করুন। অনেক সময় সে সরাসরি না বললে আপনার পক্ষে বুঝা কষ্টকর হবে যে, আপনি কী করলে সে খুশি হবে। তাই সবসময় নিজে থেকে অনুমান করার চেষ্টা করবেন না। বরং মাঝে-মধ্যে সরাসরি সঙ্গীনী থেকে জেনে নেবেন।
তার সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখুন
জীবনসঙ্গীনীর আগ্রহগুলোকে ছোট মনে করবেন না, তাকে সুখী করার চেষ্টা করুন। অনেক স্বামী নিজের স্ত্রীর আগ্রহের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না, একে কোনো বিষয়ই মনে করে না। এমনটি ভুলেও কখনও করবেন না।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত ঘটনাতে আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একদা হজরত সফিয়া (রা.) কাঁদছিলেন। কারণ ছিল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি দুর্বল ও ধীরগতির উটে চড়িয়েছেন। নবী করিম (সা.) জানতে পেরে স্ত্রী সফিয়ার অশ্রু মুছে দেন ও উট পরিবর্তন করে নতুন একটি উটে তাকে চড়ার ব্যবস্থা করেন।
স্ত্রীর সঙ্গে মজা করুন
নিজের জীবনসঙ্গীনীর সঙ্গে ফুর্তি করুন, মজা করুন। তার মন ভালো করে দিন। দেখুন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে মরুভূমিতে দৌঁড় খেলেছেন।
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করুন
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হজর আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইরে কর্মব্যস্ত থাকা সত্বেও যখনই বাসায় আসতেন- আমাদের কাজে সহযোগিতা করতেন। আবার আজান দিলে নামাজে চলে যেতেন। ’ –সহিহ বোখারি: ৬৭৬
স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ঘোষণাটি সর্বদা মনে রাখবেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে যে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করি। ’
সবসময় মনে রাখবেন, স্ত্রীর সঙ্গে যা করছেন হাশরের মাঠে মহান আল্লাহর আদালতে তার জবাব দিতে হবে। স্ত্রীকে নিজের বন্ধু ভাবতে শিখুন। তাহলেই অনেক সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারবেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
এমএইউ/