বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায় নিজস্ব নিয়ম-রীতিতে বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বিবাহকেন্দ্রিক যাবতীয় আয়োজনে তাদের স্বকীয়তা ও লোকজ সংস্কৃতির প্রভাব থাকে।
তুরস্ক
তুরস্কে বিবাহের আয়োজন শুরু হয় বিবাহের জন্য কনের আক্ষরিক অর্থে হাত চাওয়ার মাধ্যমে। ‘সজ কেসমে’ নামের এ অনুষ্ঠানে অতিথিদের সামনে প্রকাশ্যে হাত চাওয়া হয়। এর মাধ্যমেই বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং বর-কনের মধ্যে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত করা হয়। কনেকে আংটি ও রুমাল দেওয়ার মাধ্যমে এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়। এ অনুষ্ঠান বান্দানা হিসেবে পরিচিত।
মূল বিবাহের আগের দিন জোহর নামাজের সময় বিয়ের পতাকা ওড়ানো হয়। বিয়ের আগের রাতে ‘কিনা গেজেসি’ অনুষ্ঠানে কনের হাত-পায়ে মেহেদির নকশা আঁকা হয়। বিবাহের দিন কনের কোমরে তার পিতা, ভাই বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা একটি লাল ফিতা বেঁধে দেয়। এটি ‘বেকারেত কুশায়ি’ নামে পরিচিত।
মূল বিবাহ অনুষ্ঠান শুরু হয়, বর মসজিদ থেকে একজন হোজা (ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব) নিয়ে কনের বাড়িতে আগমনের পর। স্বামীর ঘরে গিয়ে নববধূ তার শাশুড়ির কাছ থেকে বিভিন্ন উপহার গ্রহণ করে।
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়ার মুসলিম বিবাহে দুইদিন ধরে আয়োজন চলে। আলাদা করে বললে, যেসব বুলগেরিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা তুর্কি-ওসমানিদের রীতি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথমদিন বিবাহের সকল উপহার কনের ঘরের বাইরে এনে রেখে আসা হয়। দ্বিতীয় দিন বৈবাহিক জীবন শুরুর চিহ্ন হিসেবে কনের মুখ বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। মুখ রাঙানোর এই প্রথাকে ‘জেলিনা’ বলা হয়। এরপর একজন ইমাম এসে বিবাহের আনুষ্ঠানিক কাজ সম্পন্ন করেন এবং নবদম্পতিকে আশীর্বাদ ও শুভকামনা জানান। এরপর বর কনেকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। ঘরে আনার পরপর বর কনের মুখ থেকে রংগুলো মুছে ফেলে।
দাগেস্তান
ককেশাসের দাগেস্তান রাশিয়ার আওতাধীন একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত রাষ্ট্র। এখানকার মুসলমানরা বিবাহের দুইটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। একটি বরের বাড়িতে এবং অপরটি কনের বাড়িতে। বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ও দূরদূরান্তের লোকজনকে দাওয়াত করা হয়। ফলে অনুষ্ঠানে আগত অতিথির সংখ্যা সাধারণভাবে ৫০০শ’ থেকে ১৫০০শ’ হয়।
অতীতে বর নববধূকে তার অনুমতি ও সম্মতিক্রমে অপহরণ করে নিয়ে যেত। এমন করার কারণ ছিল, যখন বর কনেপক্ষ থেকে দরিদ্র হত। তখন কনের অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে কনেকে অপহরণ করে নিয়ে বিবাহ করতো। যাতে বিবাহ অনুষ্ঠানের অতিথিদের আপ্যায়নের খরচ থেকে বাঁচতে পারে।
এখন এই সংস্কৃতি আর নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিয়ে হওয়া আবশ্যক। বর্তমানে বিবাহ নিবন্ধনের পর, দম্পতি তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করার জন্য এলাকার কোনো মসজিদ পরিদর্শন করে।
এরপর বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারসহ বিবাহ উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট হলে ফিরে আসে এবং সবাই মিলে বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বিয়ে সমাপ্তির আনন্দে দাগেস্তানিরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বিভিন্ন দেশে মুসলিম সংস্কৃতির বিবাহ (পর্ব- ০১)
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ