কান (ফ্রান্স) থেকে: ভোর থেকেই হিমেল হাওয়া বইছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে সড়কে এসে মনে হলো সোমবার (৯ মে) দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানে পা রেখে যা মনে হয়েছিলো তা একেবারে ভুল নয়।
যদিও শীত যে করছে না তা নয়। হাওয়ার বেগ একটু বেড়ে গেলেই শীত শীত লাগছে। অথচ ফরাসিদের কাছে এটাই গ্রীষ্ম! মেয়েদের শর্টস-স্কার্ট আর ছেলেদের হালকা পোশাক-আষাকই তা বলে দিচ্ছে। শীত শেষে গ্রীষ্ম শুরু হয় বলে প্রতি বছর মে মাসে হয়ে থাকে কান চলচ্চিত্র উৎসব। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
বুধবার (১১ মে) শুরু হবে ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাংবাদিকরা এসে হাজির হয়ে গেছেন কানে। ব্যাজ অর্থাৎ পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল থেকে উৎসবের মূলকেন্দ্র প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে আমন্ত্রিত সাংবাদিকরা সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে তিনটা) এসে তাদের সঙ্গে আমিও দাঁড়ালাম। সংবাদকর্মীদের সহযোগিতার জন্য আয়োজকদের প্রতিনিধিরা আছেন ভবনের সামনে।
ব্যাজের সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাগজপত্র দিলেন আয়োজকরা। এর মধ্যে আছে প্রেসরুমের কম্পিউটার ব্যবহারের ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডসহ উৎসবের গাইড, প্রদর্শনীর সময়সূচি ও স্মরণিকা। সঙ্গে স্পার্কলিং ওয়াটার ফ্রি। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাইরে বেরোতেই বুঝে গেলাম, বিশ্ব চলচ্চিত্রের এই তীর্থস্থান জমতে শুরু করেছে।
উৎসুক মানুষের ভিড় ক্রমে বাড়ছে। উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশগ্রহণকারীদের অনেককে দেখলাম ব্যাজ অর্থাৎ পরিচয়পত্র আর ব্যাগ সংগ্রহ করে বেরোচ্ছেন। এই বিভাগে এবার বাংলাদেশের দুটি ছবি আসছে।
প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের দেওয়ালে এঁটে রাখা হয়েছে উৎসবের হলুদ রঙা অফিসিয়াল পোস্টার। এটা এতোই বিশাল যে চোখ ফেরানো দায়! ভূমধ্যসাগরের পাশের ভবনে সিঁড়ি বেয়ে দিগন্তে নিজের স্বপ্নের পথে একজন মানুষের এগিয়ে যাওয়া দেখা যাচ্ছে এই পোস্টারে।
ফ্রেঞ্চ নিউওয়েভের অন্যতম রূপকার ফরাসি চলচ্চিত্রকার জ্যঁ লুক-গদারের ধ্রুপদী ছবি ‘কনটেম্পট’-এর স্থিরচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে এটি। পোস্টারের মানুষটি হলেন ‘কনটেম্পট’ ছবির অভিনেতা মিশেল পিকোলি। ছবিটি মনে করিয়ে দেয় ফরাসি সাংবাদিক মিশেল মুলেটের নিরন্তর উদ্ধৃতি, যেটি ব্যবহার করা হয় ‘কনটেম্পট’ ছবির শুরুতে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চেনা পৃথিবীকে বদলে দেয় চলচ্চিত্র। ’
পোস্টার থেকে দৃষ্টি নামিয়ে ঢুকলাম ভবনে। দোতলায় প্রেসরুম। আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের লেখালেখির জন্য এখানে প্রায় ১০০টি কম্পিউটার আছে। প্রেসরুমে কিছুক্ষণ কাজ করে গেলাম তিন তলায়। এখানেই তারকাদের নিয়ে হবে সংবাদ সম্মেলনগুলো। ওয়াইফাই জোনে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহারের কার্ড দেওয়া হচ্ছে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের। এই জোনে ল্যাপটপ নিয়ে সাংবাদিকরা কাজ করতে পারেন। এর পাশেই প্রেস অফিস। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানতে যাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
বিকেলের দিকে হঠাৎ পুরো ভবন খালি করে দেওয়ার ঘোষণা এলো। একে একে সংবাদকর্মী, আয়োজকদের প্রতিনিধিসহ সবাই ভবনের বাইরে বেরিয়ে পড়লেন। তবে, ঘোষণাটা সাময়িক। কিছুক্ষণ পরই আবার ভবনে আসা যাবে বলে জানানো হলো। ভবন থেকে বেরিয়ে সাগরপাড়ের দিকে গেলাম। পথিমধ্যে কয়েকটি দেশের প্যাভিলিয়নে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখা গেলো।
সমুদ্র সৈকতে সূর্যস্নান করছেন কেউ কেউ। সংখ্যাটা হাতেগোনা। বালুতে একটি ছোট আকারে প্ল্যাকার্ড পুতে রাখা হয়েছে। তাতে লেখা- 'অনলি ওয়ান অ্যাংরি বার্ডস পার পারসন প্লিজ'। জনপ্রিয় ভিডিও গেমস 'অ্যাংরি বার্ডস' অবলম্বনে নির্মিত ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে এবারের উৎসবে। সেজন্যই এই প্ল্যাকার্ড।
শুধু 'দ্য অ্যাংরি বার্ডস' নয়, এ উৎসবে অংশ নিতে যাওয়া সব ছবিরই উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। এখানে আমন্ত্রিতরাই বিশ্বে সবার আগে দেখার সুযোগ পাবেন ছবিগুলো। দেখবে বাংলানিউজও।
ফ্রান্স সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
জেএইচ/পিসি
** ইস্তাম্বুলে আইসক্রিম কিনলে ওয়াইফাই ফ্রি!