কান (ফ্রান্স) থেকে: কান উৎসবে বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত সংবাদকর্মীরা মূলকেন্দ্র প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের অলিগলি থেকে শুরু করে সবখানেই যেতে পারেন চাইলে। তাদের জন্য ছবি দেখার সুযোগও থাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ থেকে উড়ে এসেছি দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না দেখে কি থাকা যায়? কিন্তু প্রবেশপত্র বা টিকেট পাই কোথায়? গতবার আয়োজকদের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নিয়ে উদ্বোধনী ও সমাপনী আয়োজনের টিকেট সংগ্রহ করেছিলাম। এবারও একই কায়দা অনুসরণ করলাম।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুর থেকেই চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। টিকেট চেয়ে ই-মেইলও করেছিলাম। উত্তর এলো অনুরোধ বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু মন তো মানে না!
বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে গেলাম এক ইনফরমেশন ডেস্কে। এখানকার একজন প্রতিনিধি আমার নাম ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর নাম টুকে রাখলেন। সান্ত্বনা নিয়ে ফিরলাম। কিন্তু বুধবার (১১ মে) দুপুর অবধি আর কোনো খবর নেই। পরিস্থিতি সুবিধার মনে হলো না। বুঝলাম অনুরোধের ঢেঁকি বোধহয় অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি।
অগত্যা যেখানে তথ্য টুকে রাখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে ধর্ণা দিলাম। মেয়েটি ঊর্ধ্বতন একজনের সঙ্গে কথা বলে এসে ভেতরে আসার জন্য বললেন। ঢুকে চিনে ফেললাম ভদ্রমহিলাকে। ইনিই গত আসরে আমাকে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের সৌজন্য টিকেট দিয়েছিলেন। ঢোকা মাত্রই আমার হাতে টিকেট ধরিয়ে দিলেন। টিকেটে আমার নাম লেখা দেখে কলিজায় পানি এলো!
টিকেটে উল্লেখ রয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা) গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঢোকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। সুতরাং ওই সময়ের এক মিনিট আগে হলেও যেতে হবে। তাছাড়া টিকেটে এ-ও জানানো হয়েছে, আসন খালি থাকা পর্যন্ত ঢোকা যাবে। তাই টিকেট পাওয়া মানেই প্রবেশ নিশ্চিত নয়। ফলে সোয়া ১০টার মধ্যে গলায় বো-টাই পরে রওয়ানা হলাম। টাক্সেডো সকালেই হোটেল থেকে পরে বেরিয়েছি। উৎসবের সান্ধ্যকালীন ড্রেস কোড এটাই। তবে নারীরাই কেবল যা ইচ্ছে তা পরে আসতে পারে!
গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনের পুরোটা জুড়ে বসানো হয়েছে লাল গালিচা। সেখানে যাওয়ার জন্য যেসব সারি রয়েছে সেগুলোর আবার বিভিন্ন নাম। আমার টিকেটে লেখা ‘ব্যালকন’। সেই সারি দিয়ে ঢুকলাম কানের স্বপ্নিল লাল গালিচায়। এখান দিয়েই স্বপ্নের তারকারা হেঁটে যান। আমিও হাঁটলাম। এই অনুভূতি এখানে পা না মাড়ালে বোঝা অসম্ভব!
লাল গালিচায় হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে একটু ওপরে উঠে সেলফি তুললাম। আশেপাশের প্রায় সবাই একই কাজে মগ্ন!
লাল গালিচায় হাঁটার পর সাদা রঙা সিড়ি বেয়ে সাদা দেওয়াল দেখতে দেখতে দোতলায় উঠলাম। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঢুকেই মনটা ভরে গেলো! কি বিশাল প্রেক্ষাগৃহ! সব আসনই কালো রঙা। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে সব পুরুষ টাক্সেডো আর বো-টাই পরে বসে আছেন। নারীরা আছেন বাহারি পোশাকে। প্রেক্ষাগৃহের বিশাল পর্দায় দেখানো হচ্ছে লাল গালিচায় পা মাড়ানোর জন্য কারা কারা এসেছেন, কারা হাঁটছেন। আর কারাই বা গাড়ি থেকে নেমে সড়কের একপাশে অপেক্ষমাণ ভক্তদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন।
সবশেষে লালগালিচার ওপর হেঁটে এলেন বর্ষীয়ান মার্কিন পরিচালক উডি অ্যালেন ও তার নতুন ছবি ‘ক্যাফে সোসাইটি’র কলাকুশলীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা জেসি আইজেনবার্গ, অভিনেত্রী ক্রিস্টে স্টুয়ার্ট, ব্লেক লাইভলি, অভিনেতা কোরি স্টল ও চিত্রগ্রাহক ভিত্তোরিও স্তোরারো।
তাদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকলেন উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। পর্দায় সে দৃশ্য দেখে মিনিট দুয়েক করতালি থামলো না। সঙ্গে শিসও বাজালেন কেউ কেউ। এ দৃশ্য যেন স্বপ্নময়! কানের সবকিছুই আসলে স্বপ্নের।
ফ্রান্স সময়: ০৪৪৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৬
জেএইচ/এসআর
** শুরুর আগেই জমে উঠেছে লড়াই!
** বিচারকদের সামনে বাংলানিউজ
** সারারাত বৃষ্টির পর ‘ক্যাফে সোসাইটি’
** ইস্তাম্বুলে আইসক্রিম কিনলে ওয়াইফাই ফ্রি!
** ব্যাজের সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাগজপত্র দিলেন আয়োজকরা
** কান উৎসবের পর্দা ওঠার অপেক্ষা