কান (ফ্রান্স) থেকে : প্রেস রুমে বসে কাজ করার সময় ফ্রান্স টু টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদক জুলি এগিয়ে এসে কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলেন কোন দেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশ বলার পর তার মধ্যে আগ্রহ জন্মালো।
প্রতিযোগিতা বিভাগের সব ছবি দেখেছি কি-না, কোনটা বেশি ভালো লেগেছে, কেনো ভালো লেগেছে, সেরা অভিনেতা আর সেরা অভিনেত্রী কে হতে পারেন ইত্যাদি। কিন্তু ঘুরেফিরে তার মূল প্রশ্ন একটাই- কোন ছবি জিততে পারে স্বর্ণপাম তথা পাম দ’র? শুধু জুলি নন, দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানে এখন এটাই সবচেয়ে উচ্চারিত প্রশ্ন।
সবার মধ্যেই এ নিয়ে কৌতূহল। জুলিকে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বললাম, কেনো যেন মনে হচ্ছে এবার একজন নারী নির্মাতার হাতে যাবে স্বর্ণপাম। এ ক্ষেত্রে মারেন আদে এগিয়ে থাকছেন। তার তিন ঘণ্টার জার্মান ছবি ‘টনি আর্ডম্যান’ ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের। তিনি রীতিমতো চমকেই দিয়েছেন বলা যায়। কারণ কথায় আছে জার্মানদের হিউমার সেন্স নেই!
হাস্যরসের মোড়কে সিরিয়াস কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন মারেন। এ ছবিকে ঘিরে দর্শক ও সমালোচক উভয়ের পছন্দ মিলেছে একই মোহনায়। এটি সেরা হলে কানের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো নারী নির্মাতার ছবি স্বর্ণপাম জিতবে। তবে ইতিহাস কথা বলছে না মারেন আদের পক্ষে। এটি সবে তার তৃতীয় ছবি। তাছাড়া গত কয়েক বছরে বর্ষীয়ান নির্মাতাদেরকেই দেওয়া হয়েছে স্বর্ণপাম।
যেমন গত আসরের কথাই ধরুন। সমালোচকদের বেশিরভাগই নিশ্চিত ছিলেন ‘সান অব সাউল’ পাবে স্বর্ণপাম। কিন্তু মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া জ্যাক অদিয়ারের ‘ধীপান’ সেরা হলো। এর প্রদর্শনীও হয়েছিলো উৎসবের শেষের দিকে। এ ক্ষেত্রে মারেন আদের চেয়ে বেশি সম্ভাবনা আছে আন্ড্রিয়া আর্নল্ডের। বেশিরভাগ সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছে তার ‘আমেরিকান হানি’। এটাকেও ভাবা হচ্ছে ফেভারিট। জিম জারমাশের ‘প্যাটারসন’ প্রশংসিত হলেও স্বর্ণপাম জয়ের মতো বড়সড় বক্তব্য ও বিশাল ভাবনা এতে নেই। জেফ নিকোলসের ‘লাভিং’ প্রচুর প্রশংসা কুড়ালেও এটাকে অস্কারের জন্য উপযোগী মনে করা হচ্ছে। তবে প্রতিযোগিতা বিভাগের শেষ ছবি হিসেবে প্রদর্শিত আসগর ফারহাদির ‘দ্য সেলসম্যান’ স্বর্ণপাম জিতে চমকে দিতে পারে।
গত তিন-চারদিন ধরে সংবা সম্মেলন কক্ষে ঢোকার পর তারকা ও নির্মাতাদের আসার অপেক্ষায় থাকার সময় কেটেছে স্বর্ণপাম নিয়ে আলোচনা করে। বেইজিংয়ের মুভি ভিউ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক রাং সুসাংয়ের ভোট দিলেন ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’। তার কাছে ‘দ্য নিয়ন ডেমন’-এ নিকোলাস উইন্ডং রেফনের স্টাইল দারুণ লেগেছে। রুশ নারী সাংবাদিক তাতিয়ানা শোরোকোভা রোমানিয়ার ক্রিস্টি পুইউ পরিচালিত ‘সিয়েরা নেভাদা’ দেখে উচ্ছ্বসিত। এটাই এবারের অন্যতম আন্ডারডগ।
রোমানিয়ার আরেক ছবি ক্রিস্টিয়ান মুনজিউর ‘গ্রাজুয়েশন’কেও ভাবা হচ্ছে ফেভারিট। ২০০৭ সালে ‘ফোর মান্থস থ্রি উইকস টু ডেজ’-এর জন্য স্বর্ণপাম জেতেন তিনি। ‘আই, ড্যানিয়েল ব্লেক’ ছবির সুবাদে সম্ভাবনা আছে আগে একবার স্বর্ণপাম জেতা ব্রিটিশ নির্মাতা কেন লোচেরও। এবার তিনি কিংবা মুনজিউ জয়ী হলে যুক্ত হবেন দু’বার করে এই পুরস্কার জয়ীদের অভিজাত ক্লাবে। এ রেকর্ড দারদেন ভ্রাতৃদ্বয়, মাইকেল হানেকি, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মতো খুব কম নির্মাতারই আছে।
সেরা অভিনেত্রী নির্বাচনে বিচারকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে নিঃসন্দেহে। কারণ ২১টি ছবির ১১টিই নারীকেন্দ্রিক। ‘টনি আর্ডম্যান’ স্বর্ণপাম জিতলে এর অভিনেত্রী সান্ড্রা হুলারকে এ ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হবে। কারণ প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত কোনো ছবিই দুটি পুরস্কার জেতে না। এটাই কানের পলিসি।
সেরা অভিনেত্রী বিভাগে এগিয়ে থাকছেন সোনিয়া ব্রাগা (অ্যাকুয়ারিয়াস), ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট (পার্সোনাল শপার), আদেল ইনেল (দ্য আননৌন গার্ল), রুথ নাগা (লাভিং), আদ্রিয়ানা উগারতে ও এমা সুয়ারেজ (জুলিয়েটা) এবং ইজাবেল হাপার্ট (এল)। তাদের মধ্যে সোনিয়া ব্রাগাকেই ধরা হচ্ছে ফেভারিট। যদি না তার অভিনীত ব্রাজিলের ক্লেবার মেনডোঙ্কা ফিলোর ‘অ্যাকুয়ারিয়াস’ স্বর্ণপাম জেতে।
প্রতিযোগিতা বিভাগে ফরাসি অভিনেত্রী মারিয়ন কঁতিয়ার দুটি ছবি থাকলেও তাকে নিয়ে আশা নেই কারও। শুন্য হাতে ফিরতে হতে পারে তার দুই ছবি জাভিয়ে দোলানের ‘ইটস অনলি দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ও নিকোল গার্সিয়ার ‘ফ্রম দ্য ল্যান্ড অব দ্য মুন’।
সেরা অভিনেতার দৌড়ে আছেন অ্যাডাম ড্রাইভার। জিম জারমাশের ‘প্যাটারসন’ ছবিতে কবিতা লেখা বাস ড্রাইভার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘টনি আর্ডম্যান’ ছবির পিটার সিমোনিসেককেও ফেভারিট ভাবা হচ্ছে।
কান নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা সবচেয়ে বোকামির কাজ! কোনো পূর্বাভাসই আদতে ফলে না। সব অনুমান কাগজে-কলমেই শেষ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। তবুও বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে ও আমার দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বিজয়ী তালিকা তৈরির চেষ্টা করলাম।
বাংলানিউজের ভবিষ্যদ্বাণী
স্বর্ণপাম : ‘গ্রাজুয়েশন’, ‘টনি আর্ডম্যান’, ‘আই, ড্যানিয়েল ব্লেক’, ‘জুলিয়েটা’, ‘লাভিং’ (যে কোনো একটি)
গ্রাঁ প্রিঁ (রৌপ্য) : অ্যাকুয়ারিয়াস
জুরি প্রাইজ (ব্রোঞ্জ) : পার্সোনাল শপার
সেরা পরিচালক : নিকোলাস উইন্ডিং রেফন (দ্য নিয়ন ডেমন)
সেরা চিত্রনাট্য : জিম জারমাশ (প্যাটারসন)
সেরা অভিনেতা : অ্যাডাম ড্রাইভার (প্যাটারসন) পিটার সিমোনিসেক (টনি আর্ডম্যান)
সেরা অভিনেত্রী : সোনিয়া ব্রাগা (অ্যাকুয়ারিয়াস), রুথ নেগা (লাভিং), আদেল ইনেল (দ্য আননৌন গার্ল), ইজাবেল হাপার্ট (এল)। তাদের মধ্যে যে কোনো একজন অথবা যৌথভাবে জয়ী হতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
জেএইচ
** শেষ মঞ্চ প্রস্তুত
** শেষবেলায় মেল গিবসনের অ্যাকশন
** জিতে গেলো সাদাকালো যুগের প্রেম
** ফিপরেস্কি জিতে স্বর্ণপামের সম্ভাবনা
** আসগর ফারহাদির ইরান ও কানে ফেরা
** লালগালিচায় তোলা ছবির দাম
** ইনভাইটেশন দিলে কোলাকুলি ফ্রি!
** মেয়রের মধ্যাহ্নভোজে দেড় ঘণ্টা
** ছক্কা হাঁকানোর দিনে!
***কান হয়ে উঠলো বাংলাদেশময়
** মল্লিকার উড়ন্ত চুম্বন
**সোনমের পোশাক নিয়ে হাসাহাসি
** রাসেল ক্রো ও রায়ান গসলিংয়ের সঙ্গে সেলফি
** চলচ্চিত্রের মহাযজ্ঞে তুমুল ব্যস্ত দিন
** মারিয়ন ছড়ালেন ফরাসি সৌরভ
** কান ক্ল্যাসিকসে খান আতার ছবি
** নতুন নতুন ও ধ্রুপদী ছবির মিলনমেলা
**বৃষ্টিভেজা কান...
**ঐশ্বরিয়া পেলেন লাল গোলাপের তোড়া
**স্টিভেন স্পিলবার্গের খুব সামনে
** লালগালিচায় তৌকীর-বিপাশা
**প্রস্তুতি ছাড়াই কান মাতালেন ঐশ্বরিয়া
** পাগলা হাওয়ার তোড়ে...
** এই রাত ক্লুনি-আমালের!
***আরাধ্যকে নিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া
***জুলিয়া রবার্টসের পায়ে জুতা নেই!
***তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকার নাম!
***জুলিয়েট বিনোশকে দেখে চোখ ফেরানো দায়!
***এক প্যাকেট বাদাম দুই ইউরো
**মন কেড়ে নেওয়া গল্পগুলো
**কান উৎসবের বাজেট ২ কোটি ইউরো!
**বাংলানিউজের ক্যামেরাবন্দি জুলিয়া রবার্টস ও জর্জ ক্লুনি
**দেখুন কানে কি না হয়!
** পর্দা উঠলো কান উৎসবের
** হেঁটেছি স্বপ্নের লাল গালিচায়
** শুরুর আগেই জমে উঠেছে লড়াই!
** বিচারকদের সামনে বাংলানিউজ
** সারারাত বৃষ্টির পর ‘ক্যাফে সোসাইটি’
** ইস্তাম্বুলে আইসক্রিম কিনলে ওয়াইফাই ফ্রি!
** ব্যাজের সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাগজপত্র দিলেন আয়োজকরা
** কান উৎসবের পর্দা ওঠার অপেক্ষা