তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উঁকি মারে আকাশে।
মনে সাধ কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
একেবারে উড়ে যায়,
কোথা পাবে পাখা সে।
খুব সুন্দর একটা কবিতা তাই না? হ্যাঁ। সত্যিই খুব সুন্দর। কবিতাটার নাম ‘তালগাছ’। আর এই অসাধারণ কবিতাটা কে লিখেছেন জানো?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
নামটা শোনামাত্র নিশ্চই তুমি বলবে আরে আরে, ওনাকে তো আমি চিনি। ওনার লেখা পড়েছি তো। কী ভালো ভালো সব লেখা!
সত্যিই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব ভালো লিখতেন। আর এত ভালো লিখতেন যে তাকে বিশ্বকবির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তুমি কী জানো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন। আর আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটাও কিন্তু তারই লেখা। শুধু আমাদের নয়, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও তার লেখা।
এই অসামান্য প্রতিভাধর কবির জন্মদিন কিন্তু ২৫শে বৈশাখ। বাংলা সন ১২৬৮ বঙ্গাব্দে ভারতের কোলকাতার জোড়াসাঁকোর নামকরা ঠাকুর বাড়িতে তার জন্ম। আর তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে। তার বাবার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিন্তু নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয়নি। ১৭ বছর বয়সে তিনি লেখাপড়া করতে বাইরে যান। কিন্তু সে পড়া শেষ না হতেই ফিরে আসেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব ছোটবেলায়ই তার প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাব্যগ্রন্থ ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, সুরকার, গীতিকার, নাট্যকার, নাট্যপ্রযোজক, আর্টিস্ট এবং অভিনেতা।
শুরুতেই বললাম না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন। ১৯১৩ সালে তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১৩ সালে তার নোবেল জয়ের একশ’ বছর পালিত হয়েছে।
কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গান- সাহিত্যের সব শাখাতেই অবাধ বিচরণ ছিল কবিগুরুর। তিনি শুধু বড়দের জন্যই লেখেননি, লিখেছেন ছোটদের জন্যও।
সেকথা নিশ্চই শুরুর ওই কবিতা দেখেই বুঝে নিয়েছ? তোমাদের জন্য এরকম আরও অনেক সুন্দর আর মজার সব লেখা লিখেছেন রবি ঠাকুর। তার কিছু কিছু হয়তো তুমি পড়েছ। তোমার পাঠ্য বইয়ে, কিংবা অন্য কোনো বইয়ে।
“এক যে ছিল তোতা পাখি। সে ছিল মূর্খ। সে কেবলই গান গাইত, শাস্ত্র পড়ত না। লাফাত, উড়ত, নিয়ম-কানুন জানত না। এ দেখে রাজার খুব রাগ হল। তিনি বললেন এমন পাখি তো কোনো কাজে লাগে না। মন্ত্রীকে বললেন পাখিটার শিক্ষার ব্যবস্থা করতে। অমনি তো তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। পাখির জন্য সোনার খাঁচা বানানো হলো, করা হলো অনেক আয়োজন। পাখিকে শিক্ষা দেবার আয়োজন। পাখির খাবার-দাবার দেওয়া বন্ধ করে তাকে খাওয়ানো হতে লাগল পুঁথির কাগজ। .....
তারপর পাখিটার কী হলো? সেসব কথা যদি জানতে খুব ইচ্ছে করে, তবে তোমায় পড়তে হবে রবি ঠাকুরের “তোতাকাহিনী” গল্পটা। তিনি সবার জন্য লিখতেন। তুমি যে ধরনের লেখা ভালোবাসো, নিঃসন্দেহে তা রবীন্দ্রনাথের লেখার সাথে মিলে যাবে।
তুমি যদি গাছপালা ভালোবাসো, অর্থাৎ যদি হও প্রকৃতিপ্রেমী, তবে তুমি পড়তে পারো রবি ঠাকুরের ‘বলাই’ গল্পটি। এখানে একটা বাচ্চা ছেলের গাছের প্রতি ভালোবাসার কথাই তোমাদের উপযোগী করে সহজ-সরল আর সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। প্রকৃতি নিয়ে তার আরও অনেক লেখা আছে। আছে হাস্যরসপূর্ণ নাটিকা আর মজার মজার সব কবিতাও। এর মধ্যে কিছু কবিতা আবার তোমায় নিয়ে যাবে কল্পনার রাজ্যে। সেখানে তুমি হয়ে যাবে বীরযোদ্ধা। না, না। আমি কিন্তু এমনি এমনি বলছি না। সত্যিই এমন কবিতা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। জানতে চাও কোন কবিতা? কবিতাটার নাম ‘বীরপুরুষ’। আরও অনেক অনেক সুন্দর লেখা আছে রবীন্দ্রনাথের।
সেগুলো যদি তুমি না পড়ো, তবে কিন্তু খুব ভুল করবে। যদি তুমি বই পড়তে ভালো না-ও বাসো, আমি নিশ্চিত, রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ার পর তোমার বই পড়ার আগ্রহ জন্মে যাবে।
ভাবছ এত্ত সব লেখা কীভাবে সংগ্রহ করবে? এত এত বই কীভাবে পাবে? এবার কিন্তু আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি। ছোটদের জন্য রবি ঠাকুরের লেখাগুলো সংকলিত হয়েছে ‘কৈশোরক’ নামক একটি সংকলনে। এখানে তুমি অনেক মজার মজার সব লেখা পাবে। সেগুলো পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল লেগে যাবে। আবার পাবে দুঃখ-বেদনার কাহিনীও। এগুলো তোমার চোখে জল আসবে, সেকথা আমি হলফ করে বলতে পারি। এ বইটা যদি তুমি জোগাড় করে নিতে পারো, তাহলে অনেকগুলো লেখা একসাথে পেয়ে যাবে। আর যদি নাও পারো, তাতেও ক্ষতি নেই। অন্য অনেক বই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটদের লেখাগুলো নিয়ে। সেসব বইয়েও তুমি পেয়ে যাবে তোমার পছন্দমত গল্প, কবিতা কিংবা নাটিকা।
সামনে তো তোমার গ্রীষ্মের ছুটি। এ সময়টায় পড়ে নিতে পারো বইগুলো। আর সেজন্য কিন্তু তোমায় এগুলো এখনি সংগ্রহ করে নিতে হবে। তারপর গ্রীষ্মের ছুটিতে মজা করে বসে ফলফলাদি খাবে আর আয়েশ করে গল্পের বই পড়বে।
আর যদি নাও সংগ্রহ করতে পারো, তাহলে জানিয়ে দিই, এখন কিন্তু এই বইগুলোর অনলাইন সংস্করণ, মানে ই-বুক হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোও কিন্তু পড়তে পারো। এতে আর তোমার কষ্ট করে বই খোঁজাখুঁজি করতে হবে না।
বাসায় বসেই পেয়ে যেতে পারো পছন্দের বইটি। তোমরা কেউ কেউ হয়তো গ্রামে দাদাবাড়ি বা নানাবাড়িতেও যাবে। যাওয়ার পথের সময়টায় যাতে বিরক্তি না এসে যায় বা সময়টা যাতে বৃথাই নষ্ট না হয়, সেজন্য কিন্তু ব্যাগে রাখতে পারো একটা বই। কাজ না থাকলে, ভালো না লাগলে চট করে বইটা খুলে পৃষ্ঠাগুলোতে চোখ বুলাবে। দেখবে বিরক্তি কেটে গেছে। সময়টা পার হবে খুব আনন্দে। আর তোমার জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে। কে জানে, হয়তো তুমিও পারবে অসাধারণ কিছু লিখতে। হয়তো বড় হয়ে তুমিও হয়ে উঠবে একজন সাহিত্যিক কিংবা সাহিত্য সমঝদার। তাই বইগুলো পড়ে দেখতে ভুলো না যেন!
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]