(পূর্ব প্রকাশের পর)
...বিলুর মুখে ওর বাবা-মায়ের রাতের বেলা মারা যাওয়ার ঘটনা শুনলো সবাই। বিলু কেবল কাঁদছে।
তুহিন সন্ধ্যার মধ্যেই অপারেশনের নকশা ঠিক করলো। বাজারের পেছনে জব্বার মাঝির বাড়িটাই এখন রাজারকদের আখড়া। সংখ্যায় ওরা সব মিলে সারা গ্রামের ২০ জন। ওখানেই থাকে, ওখানেই খায়। রাতে ওদের কেউ বাইরে বেরোয় না। গ্রামের শমসের মেম্বারই ওদের ইন্ধন দেয়।
ঠিক হলো একদল যাবে শমসের মেম্বারের বাড়ি অপারেশনে আরেক দল যাবে জব্বার মাঝির বাড়িতে। একযোগে আক্রমণ চালাতে হবে। ওরা ভাবতেও পারবে না আর সাহায্য করারও কেউ থাকবে না। বিলু বলল, ‘মামা আমিও যাব। ’
তুহিন বলল, ‘না বাবা, তুমি কোথায় যাবা? তুমি নানুর কাছে যাও। আমি নীলুকে নিয়ে আসতেছি। ’
কিন্তু বিলু নাছোড়বান্দা হয়ে বলল, ‘আমি যাব। ওরা আমার আপুকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি ওদের ছাড়বো না। আমি মারবো ওদের। ’
তুহিন বলল, ‘ঠিক আছে। চলো। তবে কমান্ড ছাড়া নড়বে না। ওরা কিন্তু খুব শয়তান। ’
এদিকে নীলুকে রাজাকাররা আটকে রেখেছে জব্বার মাঝির বড় ছেলের ঘরে। আজ ওদের খুশির দিন। বয়াতি বাড়ির উপর প্রতিশোধ নেওয়া হলো। এই মেয়েকে মারার ভয় দেখিয়ে ওই বাড়ির সব ভালোই লুটপাট করতে পারবে ওরা। পরে মেয়েটাকে মেরে ফেললেই হবে। আর কতকাল মাঝিগিরি করবে জব্বার মাঝি? সে এবার বড়লোক হবে। এই আনন্দে খাসি জবাই করেছে। পাশের বাড়ির রহমানের মায়ের পোষা খাসি জোর করে নিয়ে এসেছে। রহমানের মা বলেছে, ‘জব্বার রে, খাসিটা নিস নে। ওটা আমার নাতির আকিকার জন্যে পুষছি। ’
জব্বার বুড়ির মাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বলেছে, ‘মরতে চাও না তো খাসি এমনি এমনি দিবা, পাকিস্তানের জন্য। ’
বুড়ি হাউমাউ করে কেঁদেছে। জব্বার অনেকদিন পর খাসির মাংস মুখে দেবে। আনন্দে আত্মহারা সে। মাংসের গন্ধে সারাবাড়ি ভুর ভুর করছে। একদিকে খাসির মাংস রান্না হচ্ছে, অন্যদিকে দলবল নিয়ে জব্বার আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাস খেলছে মনের আনন্দে। তাদের ভাবনায় ছিল না তুহিন তার দল নিয়ে অপারেশনে আসতে পারে।
ঠিক এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে ওই সময়েই চারদিকে থেকেই আক্রমণ করে সবাইকে ঘিরে ফেলল তুহিনের মুক্তিযোদ্ধারা।
বিলু দৌড়ে গিয়ে বললো, ‘ওই শয়তান! আমার আপু কই?’
জব্বার কোনো উত্তর না দিতেই তুহিন তার হাতের বন্দুকের বাট দিয়ে দুম করে জব্বারের মাথায় মারলো বাড়ি।
বিলু ‘আপুউউ...’ বলে চিৎকার দিল। ভেতর থেকে নীলুর কান্নার শব্দ শোনা গেল। তুহিন রাজাকারগুলোকে বাঁধতে বলে এগিয়ে গেল বিলুকে নিয়ে একটা তালা দেয়া ঘরের সামানে। দরজা খুলে বের করে আনল নীলুকে। বিলু নীলুকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধারা তখন জব্বার আর তার দলবলদের বাঁধতে ব্যস্ত।
(সমাপ্ত)
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৫
** নীলু আর বিলু |এহসান হায়দার
** নীলু আর বিলু | এহসান হায়দার