ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুয়েত

কুয়েত থেকে জাহিদুর রহমান

আইনে নেই, তবুও বেআইনি চর্চা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
আইনে নেই, তবুও বেআইনি চর্চা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়েত: স্থানীয় আইনে রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তারপরও এই নিষিদ্ধ কর্মটি এখানে চলছে বছরের পর বছর।

সেটা না হয় মানা গেলো। কিন্তু মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা সেই নিষিদ্ধ কর্মের সাপই এখন ছোবল দিতে শুরু করেছে পুরো কমিউনিটিকে। ক্রমাগত দংশনে বিষাক্ত করে ফেলেছে মানুষের আন্ত‍ঃসম্পর্ক।

মানবিকতা আর সহমর্মিতা এখন এখানে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। প্রবাসে এই নিষিদ্ধ রাজনীতি না হলেই বরং কমিউনিটি বেঁচে যেতো। আরও শক্তিশালী হতো মানবিক সম্পর্ক।

বাংলানিউজের কাছে এভাবেই প্রবাস রাজনীতির হালচাল তুলে ধরলেন কুয়েত প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও কুয়েতস্থ বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি আকরামুজ্জামান।

এখানে প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই শাখা-উপশাখা রয়েছে। রয়েছে অঙ্গ ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোরও শাখা নামে অনেক কমিটি। আছে জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন। দ্বিখণ্ডিত হবার মিছিল থেকে বাদ পড়েনি সিলেটের আলোচিত জালালাবাদ সমিতিও।

এই চিত্র যেমন ব্যথিত করে প্রবাসে রোদে পোড়া, খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিকদের। তেমনি এই দ্বিধা বিভক্তি দ‍ুর্বল করে দিচ্ছে প্রবাসী বাঙালিদের। প্রবাসে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাংলাদেশের ইমেজ।

কুয়েতে বড় বড় সংগঠনগুলোই বহু ধারা, উপ-ধারায় বিভক্ত। খোদ আওয়ামী লীগের এখানে চারটি গ্রুপ রয়েছে, বিএনপিও পিছিয়ে নেই। তাদের এই মরুর দেশ রয়েছে তিনটি গ্রুপ।

গেলো ভাষা দিবসে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘সভাপতির’ নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রেষারেষি আর হৈ-হট্রগোলের জেরে সবাইকে বের করে দেওয়া হয় দূতাবাস থেকে।

মতের অমিল, ক্ষমতা, প্রভাব আর স্বার্থে বিঘ্ন হলেই দল থেকে বের হয়ে কেউ পাল্টা কমিটি গঠন করছেন, তো আরেকজন পাল্লা দিয়ে আরেকটি কমিটির ঘোষণা দিচ্ছেন।

প্রতিপক্ষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে একে অপরকে বলছেন, ও কে? আমিই দলের আসল। এভাবেই চলছে কুয়েতের প্রবাস রাজনীতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী প্রবাসী বলেন, বাঙালির রক্তে রাজনীতি। সেটা জন্মের পর থেকেই আঁচ করা যায়। তাই বলে রাজনীতির নামে এতো গ্রুপিং, লবিং, শো-ডাউন এসব মানা যায় না। এতে প্রবাসে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

ঢাকা থেকে দলের কোনো নেতা আসলে টানাটানি পড়ে যায় তাকে নিয়ে। কে আসল আর কে নকল তা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে থাকতে থাকতেই শেষ হয়ে যায় নেতার সফরের মেয়াদ।

রাজতন্ত্রের এই দেশে রাজনীতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নানা কারণে গত আট বছর ধরে মৌখিকভাবে বাংলাদেশিদের মধ্যে ভিসার দরজাও বন্ধ রেখেছে দেশটি।

দিন দিন কমে যাচ্ছে এখানে আসা প্রবাসীদের সংখ্যা। সংখ্যা গরিষ্ঠতা থেকে লঘিষ্ঠতার দিকে ঝুঁকে পড়লেও তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই এখানকার প্রবাসী রাজনৈতিক নেতাদের।

দলাদলি আর বিভাজনে অতিষ্ঠ এখানকার দূতাবাস। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চারটি গ্রুপের মধ্যে রয়েছে- সাদেক হোসেন গ্রুপ, ফয়েজ কামাল গ্রুপ, রব মাওলা গ্রুপ ও সেকান্দার গ্রুপ।

এরমধ্যে সাদেক হোসেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ভিসা প্রতারণার অভিযোগে আটক হন কুয়েত পুলিশের হাতে। দেড় বছর জেল খাটার পর তাকে ফেরৎ পাঠানো হয় বাংলাদেশে।

অন্যদিকে, দেশে নানা সংকটে থাকলেও এখানে নিজেদের প্রবল অস্তিত্বের ঘোষণা দিয়ে চলেছে বিএনপির তিনটি গ্রুপ। আশরাফ –মঞ্জু গ্রুপ, শরিফ-কাদের গ্রুপ ও একরাম-কামরুল গ্রুপ।

রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শাখাও। সারা দেশের সব উপজেলায় দলটির সমান কার্যক্রম না থাকলেও কুয়েতে নেতৃত্বে রয়েছেন শাহবুদ্দিন-জিন্নাহ।

এলডিপির নেতৃত্বে রয়েছেন জাফর আহমেদ চৌধুরী আবদুল্লাহ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে সবাই সভাপতি হতে চায় বলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সিনিয়র-জুনিয়র কেউ মানে না। দশটি গ্রুপ হতে পারে। তবে গ্রুপটি কতটা টেকসই হলে সেটাই বড় প্রশ্ন।

নিজের গ্রুপটিই আসল। বিএনপির আশরাফ- প্রকৌশলী কাজী মঞ্জুরুল আলম গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী মঞ্জুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, গ্রুপিং আমাদের সংস্কৃতির বাইরে না। চাওয়া পাওয়ার অমিল হলে, অবমূল্যায়ন হলে অনেকে নতুন গ্রুপ করেন।

গ্রুপিং প্রবাসে এক ধরনের বিনোদন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের কুয়েত শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দলের জন্যে উপকার নয়। বরং এই গ্রুপিং আরও ক্ষতি করছে।

শেখ আকরামুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, গ্রুপিংয়ের অবসান জরুরি। কেন্দ্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ পরিস্থিতি। আসলে দূতাবাস বেষ্টিত আমন্ত্রণ পাবার জন্য আবার আদম ব্যাবসার সুবিধার জন্যেই প্রবাসে অনেকে রাজনীতির দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন।

কুয়েতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, রাজনীতি করতে হলে প্রথমে দেশপ্রেম থাকতে হবে, কোনো দলাদলি নয়। বরং সবাইকে একদলের পতাকা তলে আসতে হবে। যে দলের নাম বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
টিআই

** পরিবেশ পেলে বিনিয়োগ যাবে কুয়েত থেকে
** কুয়েতের জন্যে বাংলাদেশের আত্মত্যাগ
** কুয়েত পুনর্গঠনে বাংলাদেশ
**  কুয়েতে বাংলাদেশের ‘প্রিন্স’ সহিদ
** হয়রানি ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন প্রবাসীর
** অলিদের বঞ্চনা দেখার কেউ নেই
** শিল্প-সাহিত্যেও পিছিয়ে নেই প্রবাসীরা
** বাংলাদেশিদের কাজের ঠিকানা সুলাইবিয়ার ফল-সবজির বাজারও
** পরিবর্তনের দূত মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন
** কুয়েতে মানবতার ফেরিওয়ালারা!
** সততা আর নিষ্ঠা থাকলে ঠেকায় কে?
** মরুর বুকে বুকভরা নিঃশ্বাস
** শ্রমিকদের মাথার মুকুট আব্দুর রাজ্জাক
** আরব সাগর থেকে হিমেল বাতাসে ভর করে এলো ছন্দ
** মরুর কুয়েত সবুজ চাদরে ঢাকছেন নাফিস জাহান
** ফেব্রুয়ারিতেই খুলনার মারুফের জীবনে আসছে পূর্ণতা!
** কুয়েতে গুলশান!
** কুয়েতের অ্যাম্বাসেডর!
** জন্ম কুয়েতে, হৃদয় বাংলাদেশের
** সূর্য ওঠার আগেই ঘুম ভাঙে চট্টগ্রামের শাহজাহানের
** ধূসর মরুভূমিতে সবুজ স্বপ্ন!
** ফেসবুক বন্ধ, খুললো জুতা!
** লেট বিমান!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কুয়েত এর সর্বশেষ