ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে তিনজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪
ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে তিনজনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মামলার ২১ বছর পর ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেমের মালিক ডা. হেলানা পাশাসহ তিনজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
 
কারাদণ্ডের অতিরিক্ত প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


 
আসামিরা হলেন- অ্যাডফ্লেমের মালিক ডা. হেলান‍া পাশা, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ও উৎপাদন ইনচার্জ নৃগেন্দ্র নাথ বালা।
 
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেমের সঙ্গে অপর দুই আসামি আজফার পাশা ও মো. নোমানের কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে না পারায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন।
 
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬সি ধারায় তাদের এ দণ্ড দেওয়া হয়।
 
১৯৯৩ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকার ড্রাগ আদালতে মামলাটি করেছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী।
 
মামলা দায়েরের ২১ বছর পর এ রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার আগে ৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
 
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে নৃগেন্দ্র নাথ বালা পলাতক রয়েছেন। আসামি হেলানা পাশা ও মিজানুর রহমান জামিনে থেকে আদালতে হাজির ছিলেন। তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত দুই আসামি মামলার শুরু থেকেই পলাতক।  
 
রায়ের পর্যালোচনায় বিচারক বলেন, ভেজাল প্যারাসিটামল ওষুধ তৈরি করা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
 
এ আইনে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও ২ ল‍াখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

মামলার অভিযোগ, আসামিদের সাক্ষ্য ও রায়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সময়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। আর প্রত্যেক শিশুই কিডনী অকেজো হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
 
বিষয়টি সন্দেহ হলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার (অব) মকবুল হোসেন ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই ওষুধ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবগত করেন।
 
বিষয়টি নিয়ে সেসময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে।
 
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে তাদের উৎপাদিত ফ্লামোডল নামক প্যারাসিটামল সিরাপ নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডাব্লিউএইচও) পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
 
নমুনা পরীক্ষা করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি অভিমত দেয় যে, প্যারাসিটামল তৈরিতে ব্যবহৃত প্রোপাইলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ডাই ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়েছে।
 
ডাই ইথিলিন গ্লাইকলই শিশুর কিডনী অকেজো হওয়ার জন্য দায়ী।
 
ড্রাগ আদালতের বিশেষ পিপি শাহিন আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানিটির আরেক অংশীদার ডা. আনোয়ার পাশা, জাহিদ ইফতেখার পাশা ও ইসরাত পাশাকে এ মামলার আসামি করা হলেও তারা মারা যাওয়ায় আগেই তাদের মামলা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
 
মামলায় চারজন সাক্ষীর একজন ঢাকা শিশু হাসপাতালের কিডনী বিভাগের তৎকালীন প্রফেসর মো. হানিফ এ মামলায় সাক্ষ্য প্রদানের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪/আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।