ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের যুদ্ধাপরাধের রায়ের অপেক্ষা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৬
মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের যুদ্ধাপরাধের রায়ের অপেক্ষা

ঢাকা: দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার (০১ জুন)। সকালে এ রায় দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন এ তিন ভাই।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করবেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।

এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত ১১ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর একই মামলার আসামি মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।   আসামিপক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের আইনজীবী মো. মাসুদ রানা, গোলাম কিবরিয়া ও পারভেজ হোসেন ।

গত বছরের ২১ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১২ জন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে সাতজন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত বছরের ৩১ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে গত বছরের ২৮ এপ্রিল শেষ করেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর হোসেন।

এর আগে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ওইদিনই নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া (৭০) ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে(৬৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত বছরের ৩০ এপ্রিল মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সে সময় এ মামলার তদন্তকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান প্রসিকিউশন।

১৭ মে রাজ্জাককেও এ মামলার আসামি করে তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। এদিন আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

১৯ মে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আতানগিরি পাহাড় থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলাটি (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ
মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল। আর তাদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। তাদের নেতৃত্বে এ তিন ভাই বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন গ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।  

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করেন আসামিরা।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করেন। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যেকোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬  
ইএস/টিআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।