ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

এখন শুধু রায় শোনা ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
এখন শুধু রায় শোনা ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ খারিজের আদেশ প্রকাশিত হওয়ার পর এবার শুধু বাকি রইলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়টি। এ প্রক্রিয়া শেষেই ফাঁসিতে ঝুলতে হবে `হার্ডকোর সন্ত্রাসী’ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিনজনকে। অন্য দুই জঙ্গি হচ্ছেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন।

গত রোববার (১৯ মার্চ) ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানের রিভিউ খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
 
এ খারিজাদেশের ০৫ পৃষ্ঠার অনুলিপি মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে প্রকাশিত হয়েছে।

নিয়ম অনুসারে আপিল বিভাগের এ রায় হাইকোর্ট বিভাগ হয়ে বিচারিক আদালত (সিলেট) ও কারাগারে যাবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের রায় অবহিত করবেন।
 
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় অবগত হওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসা করবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তারা (মুফতি হান্নানসহ মৃতুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা) প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। তারা যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, সে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর যদি না চান, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে’।
 
‘তবে জেলকোড অনুসারে রায় প্রকাশের ০৭ দিনের আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না এবং ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। কাজেই জেলকোড মেনেই সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার পর তাদের বিষয়ে রাষ্ট্র ও জেল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
 
গত বছরের ০৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দাল আপিল না করায় তাদের দণ্ডও বহাল থাকে।

গত ১৮ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আপিল বিভাগের এ রায় যাওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। গত ০৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে এ পরোয়ানা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পড়ে শোনানো হয়।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন মুফতি হান্নান ও বিপুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। আবেদনে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাসের আরজি জানানো হয়।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।

হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন।

প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ০৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ০৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

**
মুফতি হান্নানের রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।